পুরান ঢাকার আদালতপাড়া ঘিরে সক্রিয় একটি জালিয়াতচক্র। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা, জামিননামা ও সরকারি বিভিন্ন ধরনের কোর্ট ফি জাল করে বিক্রির মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
আদালতপাড়ার কয়েকজন ভেন্ডর এই জালিয়াতচক্রের সঙ্গে জড়িত। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ‘টাউট উচ্ছেদ কমিটি’ সম্প্রতি এই চক্রের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে ভেন্ডররা এই জালিয়াতি করে আসছিল। এর ফলে বছরে সমিতির ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৫ জনের মতো একটি সংঘবদ্ধ চক্র ওকালতনামা, জামিননামা ও কোর্ট ফি জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত।’
‘টাউট উচ্ছেদ কমিটি’র সদস্য ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য তানভীর আহমেদ সজীব বলেন, ‘গত ২৮ মে টাউট উচ্ছেদ কমিটি বেশ কয়েকজন ভেন্ডরকে জাল ওকালতনামা ও জামিননামাসহ আটক করে। তাঁদের মধ্যে জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে হীরা বেপারী, আবু ইউসুফ মজুমদার ওরফে সাইফুল ও লাভলী আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই তিনজনকে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করার পর চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনজনই বর্তমানে কারাগারে আছেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রচি বাদী হয়ে মামলাটি করেন।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, হীরা বেপারী ও লাভলী আক্তার আদালত চত্বরে একটি ভেন্ডরের দোকান পরিচালনা করতেন। উচ্ছেদ কমিটি জানতে পারে তাঁরা জাল ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রি করছেন। পরে উচ্ছেদ কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান জুয়েল ও অন্য সদস্যরা ওই দোকানে অভিযান চালিয়ে দুজনকে জাল ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রিরত অবস্থায় আটক করেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন সিল, বিপুল পরিমাণ জাল জামিননামা, ওকালতনামা ও কোর্ট ফি উদ্ধার করা হয়। সমিতির কর্মকর্তাদের কাছে তাঁরা স্বীকার করেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। এই দুজন চক্রের আরেক সদস্য ইউসুফ মজুমদারের নামও বলেন। পরে তাঁর কাছ থেকেও জাল ওকালতনামা ও জামিননামা উদ্ধার করা হয়। এই তিনজন আরো জানান, মো. জসিম ও জোবায়ের নামে দুজন ভেন্ডর এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিন টাকায় ছাপিয়ে ২৫৫ টাকায় বিক্রি
জালিয়াতচক্রের আটক তিন সদস্য জানান, জাল ওকালতনামা ও জামিননামা ছাপতে তাঁদের খরচ হয় তিন টাকা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামার নির্ধারিত মূল্য ২৫০ টাকা। ভেন্ডররা সমিতি থেকে কিনে বাইরে পাঁচ টাকা লাভে বিক্রি করেন ২৫৫ টাকা। চক্রটিও জাল ওকালতনামা বিক্রি করত ২৫৫ টাকা। আবার জামিননামার নির্ধারিত মূল্য ৮৫ টাকা। জালিয়াতচক্রটি জাল জামিননামাও বিক্রি করত ৮৫ টাকায়।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি বলেন, ‘এই চক্রের সব সদস্যকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরো কেউ জাল কাগজপত্র বিক্রি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ