মোট ঋণের দুই শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে একজন ঋণখেলাপি ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন-বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নীতিমালার কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই আদেশ আরও দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। তবে এই সময়ে ওই নীতিমালার সুবিধাভোগীরা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। অর্থাৎ, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপনের সুবিধাভোগী ঋণখেলাপিরা দুই মাস কোনো ঋণ পাবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (৮ জুলাই) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
একই সঙ্গে, ব্যাংকের ঋণ বিধি ও নীতি-সংক্রান্ত রিটের এই মামলাটি হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য বলেছেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে সার্কুলারের ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য দেয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে, এ বিষয়ে আজ সোমবার (৮ জুলাই) আপিল বিভাগের নিয়মিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২ জুলাই) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ২১ মে আদেশের পর মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৬ মে ঋণখেলাপিদের নতুন করে একটা সুযোগ দিয়ে ২ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্ট জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৬ মে এটির কথা আদালতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলল, এ ধরনের সার্কুলার হয়নি। এ কারণে ঋণখেলাপিদের তালিকা দিতে ২৪ জুন পর্যন্ত তাদের সময় দেন আদালত। এর মধ্যে ওইদিন বিকেলে তারা এটা (সার্কুলার) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। তখন এ সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করি।’
তিনি বলেন, ‘২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপিরা ঋণ থেকে মুক্তি পাবে। এ কারণে সিআইবিতে তাদের নাম থাকবে না। তখন নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যাবে। এতে ব্যাংকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এ কারণে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম-মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সার্কুলের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য।’
মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ২৪ জুন হাইকোর্টে ঋণখেলাপিদের তালিকা দাখিল করা হয়।
এ রিটের সঙ্গে সম্পূরক আবেদনে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করে তা স্থগিতের আবেদন করে রিটকারী পক্ষ।