দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চতুর্থ শ্রেণির এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের ঘটনা সালিশ করে ১৪ হাজার টাকায় মীমাংসার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দোষীদের গ্রেফতার, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে কি-না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর আজ রোববার (১৪ জুলাই) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন আগামী ২১ জুলাইয়ের (সোমবার) মধ্যে তা জানানোর জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি এ আদেশ দেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১২ জুলাই ‘শিশু ধর্ষণে জরিমানা ১৪ হাজার টাকা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম ব্যারিস্টর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
প্রতিবেদনটি তুলে ধরার পর আদালত বলেন, দুইজনকে গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে। এ সময় আব্দুল হালিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও গ্রাম পুলিশ কিভাবে কাজটা করলো। সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করলো। তারাতো পাবলিক সার্ভেন্ট। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি খবর নেন। খবর নিয়ে আমাদের জানান। ওনারা (সালিশকারীরা) ৭ হাজার টাকা ভাগ করে নিয়েছেন। চাঁদাবাজি করেছেন। ওই টাকার ভাগ কে কে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে কি-না? চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে কি-না সব দেখতে হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে ইউপি সদস্য নৈতিক স্খলনের দায়ে দোষী হবেন। তিনি এটা করতে পারেন না। প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর।
এরপর আদালত এ বিষয়ে দিনাজপুরের এসপি, ওসি ও ইউএনও কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আগামী রোববারের মধ্যে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেন।
প্রতিবেদনের ভাষ্য মতে, ঘটনার দিন রিকশাভ্যান চালকের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধী মেয়ে দোকান থেকে জুস নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো। পথে একই এলাকার বাসিন্দা দুই স্ত্রীর স্বামী মেহেদুল ইসলাম (৪০) শিশুটিকে রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওইদিন দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলু, গ্রাম পুলিশ আব্বাস উদ্দিন, রাজমিস্ত্রি সুজন ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সালিশ বসে। সালিশে মেহেদুল ক্ষমা চান। পরে তাকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করে তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করা হয়। আর শিশুটির বাবাকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে কোনো মামলা না করার শর্ত দিয়ে ৩০০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়। বাকি টাকা সালিশকারীরা ভাগ করে নেন।
পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ছাত্রীর বাবা গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর মেহেদুল ও সুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।