পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্ট থাকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপকের প্রতিবেদন বিষয়ে শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেছেন, হাইটেক ল্যাব (উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণাগার) রেখে লাভ নেই, যদি খাদ্য সিকিউরড(নিরাপদ) না করতে পারে।
এ সময় আদালত ওই প্রতিবেদন বিষয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। হাইকোর্ট বলেন, দুধের বিষয়ে যেসব ক্যাটাগরিতে পরীক্ষা করা হয় এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্ট পরীক্ষার সক্ষমতা আছে কি না? এছাড়াও এটা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে সায়েন্সল্যাব এবং আইসিডিডিআরবির কতদিন সময় লাগবে সেটিও বিএসটিআইয়ের কাছে জানতে চান আদালত।
এসব জানানোর জন্য বিএসটিআইকে দুই ঘণ্টার সময় দেন আদালত। আদালত বলেন, ‘দুই ঘণ্টার মধ্যে জানান, আজ দিনের শেষেই (বিকেলে) অর্ডার দেব।’
পাস্তুরিত দুধ নিয়ে শুনানিতে আজ রোববার (১৪ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতে বিএসটিআইয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। অন্যদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
শুনানির শুরুতে আদালত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসার সোর্স এবং এসব পেলে মানব শরীরে কী কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে? বিএসটিআই কি কখনও দুধের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করে দেখেছে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন।
জবাবে বিএসটিআইএয়ের আইনজীবী বলেন, বিভিন্ন সোর্স থেকে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করে। অনেক কৃষক গরু মোটাতাজাকরণ এবং দুধ বেশি পাওয়ার জন্যও ইনজেকশন ব্যবহার করে। দুধের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার প্যারোমিটার বিএসটিআইতে আগে ছিল না। কিন্তু এখন মান পরীক্ষার বিষয়ে প্যারোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। একটি কমিটি করে দুধের মান পরীক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আদালত এ সময় জানতে চান, আদৌ পাস্তুরিত করার মধ্য দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রোধ করার সুযোগ কি রয়েছে? জবাবে আইনজীবী বলেন, যে তাপমাত্রায় হিট দেয়া হয় তাতে অ্যান্টিবায়োটিক থেকেই যাচ্ছে।
আদালত বলেন, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? জবাবে আইনজীবী বলেন, মানুষের শরীরের অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। হয়তো এ কারণেই। পাস্তুরিত করার পরও যদি অ্যান্টিবায়োটি থাকে তাহলে পাস্তুরাইজড করুক আর না করুক সেই দুধতো মানুষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন আদালত।
আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে আরও বলেন, এসব দুধ কেন এখনও বাজারজাত করা হচ্ছে? হাইটেক ল্যাব রেখে লাভ নেই, যদি খাদ্য সিকিউরড না করতে পারে? আদালত বলেন, আমরা এক ঘণ্টা সময় দেব। এই সময়ের মধ্যে কি জানাতে পারবেন?
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে জানান, বিএসটিআইয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করে আইসিডিডিআরবি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং বিএসটিআইয়ের ল্যাবে একই দুধে নমুনা পরীক্ষা করবে।
তখন আদালত বলেন, তার প্রতিবেদন কবে দেয়া হবে, সেটাও কি ছয় মাস পরে জানাবেন? দুই ঘণ্টার মধ্যে জানাবেন পরে আদেশ দেব। পরে হাইকোর্ট আবার বলেন, আজ দিনের শেষে আদেশ দেব।
এরপর রিট আবদেনের পক্ষের আইনজীবী অনিক আর হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন আলোচনা করে আদালতকে বলেন, যেভাবেই হোক না কেন দুধে বিন্দুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। এছাড়াও দুধে ভেজিটেবল অয়েল রয়েছে। সেই অয়েল কমাতে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়।
শুনানি নিয়ে আদালত অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পৃথক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএসটিআইএয়ের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দুধে জিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় কেন? তখন রিটকারী আইনজীবী বলেন, ব্যবহার করা হয় তবে সেটা মাত্রার বেশি হওয়া যাবে না।
প্রসঙ্গত, পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল ধরা পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।
এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। পরে গত বছরের ২১ মে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
খাদ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে দেয়া এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন