সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা ১১টা। অন্যান্য দিনের মতোই আদালত কক্ষে বিচারকাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বিচারক এজলাসে। চেয়ারে বসে মামলার কাগজপত্র হাতে নিলেন। হঠাৎ এক আসামি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন, অন্যজন ছুরি হাতে ধাওয়া করছেন আর বলছেন ‘তোর কারণে মামলা খাইছি’। জীবন বাঁচাতে একজন কাঠগড়া, এজলাস পেরিয়ে আশ্রয় নিলেন বিচারকের খাসকামরায়। তবু শেষ রক্ষা হল না। দিনদুপুরে বিচারকের খাসকামরার টেবিলে মাথা রেখে একজন আরেকজনকে কুপিয়ে হত্যার এই ঘটনা কোন ছিনেমার গল্প নয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (তৃতীয়) আদালতে ঘটে গেছে নজিরবিহীন এই খুনের ঘটনা। কলঙ্কজনক এ ঘটনায় বিচারপ্রার্থীর রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে পবিত্র আদালত। বিচারক-আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কাঠগড়া ও এজলাস অতিক্রম করে বিচারকের খাসকামরায় ঢুকে হত্যার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকাও।
নিয়মানুযায়ী আদালতে বিচারপ্রার্থীসহ সবার নিরাপত্তায় নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আদালতে দুই থেকে তিন জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকেন। আসামি আনা-নেওয়াই তাদের কাজ। অথচ পুলিশ থাকা সত্ত্বেও একজন আসামি কীভাবে ছুরি নিয়ে আদালত কক্ষে এলো এবং একজন অন্যজনকে ধাওয়া করে হত্যা করল সে প্রশ্নের জবাব কি আছে?
এছাড়া এ ঘটনা আসামীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিচারক কিংবা অন্য কারও সঙ্গেও হতে পারতো। তাই আদালতের ভেতরে ছুরি নিয়ে কীভাবে প্রবেশ সম্ভব হলো এ বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে এখন থেকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে সবার নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোভাবেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি জনগণ দেখতে চায় না।
এর আগেও আদালত, বিচারক এবং আইনজীবীদের ওপর জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এসব ঘটনায় বিচারকসহ কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। এরপর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি উঠেছিল। এবার এই ঘটনা জনগণকে আবারও শঙ্কিত করে তুলেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবশ্যই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিচারসংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।