আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস আজ মঙ্গলবার। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। তৎকালীন ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কয়েকটি মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে বন্দি রাখা হয় তাকে। পরে দেশজুড়ে আন্দোলনের মুখে ৮ সপ্তাহের জামিন পান শেখ হাসিনা। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয় তাকে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
তথাকথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকালে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার শেখ হাসিনাকে আদালতে নেওয়ার সাথে সাথেই সেখানে উপস্থিত হন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। তাঁর সঙ্গে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম – এর সম্পাদক ড. বদরুল হাসান কচির আলাপকালে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া অন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনার অংশবিশেষ।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি তো সেদিন আদালতে ছিলেন, আদালত প্রাঙ্গনের তখনকার পরিস্থিত সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন…
ড. মোমতাজ উদ্দিন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের এই দিনে সকাল সাতটার দিকে সুধা সদন থেকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার। এরপর পৌনে আটটার সময় ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টে নেওয়ার সাথে সাথে আমি সেখানে উপস্থিত হই। গিয়ে দেখি কোন আইনজীবী যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য নেত্রীকে কোর্টের ভেতর রেখে বাহিরে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকবার বলার পরও যখন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কেউ তালা খুলেনি তখন আমি উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলি আমি ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমার নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে অথচ আমরা আইনজীবীরা উনার সঙ্গে দেখা করতে পারব না এটা হতে পারে না। এই তালা ভেঙ্গে ফেলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছু সময় পর পুলিশ তালা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকে নেত্রীকে বেঞ্চে বসে থাকতে দেখে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। ক্রন্দনরত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নেত্রী বললেন, ‘তুই কাঁদছিস কেন? কাঁদিস না। আল্লাহ্র রহমতে ওরা আমার কিছুই করতে পারবে না।’ এরপর তিনি আমাকে কিছু নির্দেশনা দিলেন, আমি সেসব নির্দেশনা মনোযোগ সহকারে শুনে পরবর্তীতে তা পালন করলাম। একইসঙ্গে আদালতে জামিন আবেদন শুনানিতে অন্যান্য আইনজীবীদের সাথে আমিও অংশ নিলাম। জামিন নামঞ্জুরের পর নেত্রীকে যখন আদালতে থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমিসহ উপস্থিত আইনজীবীরা স্লোগানে স্লোগানে এই অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানালাম।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে আপনিসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের ভূমিকা কি ছিল?
ড. মোমতাজ উদ্দিন : সেদিন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর নেত্রীকে গাড়িতে তোলার মূহুর্ত থেকেই মূলত আমিসহ উপস্থিত সকল আইনজীবী এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো শুরু করি। এ সময় শত শত আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়লে আশেপাশের রাস্তাঘাট সব প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জননেত্রীর মুক্তির দাবিতে আইনজীবী ও পেশাজীবিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করি। অসংখ্যবার প্রিন্ট মিডিয়া ও টিভি চ্যানেলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিবৃতি প্রেরণ করি। একইসঙ্গে এসকল মামলা প্রত্যাহারসহ নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। এরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০০৮ সালের ১১ জুন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম হৃদয়বিদারক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত, অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জননেত্রীর এই গ্রেপ্তার বাংলার মানুষ আশা করেনি এবং মেনেও নেয়নি। এই অন্যায়ের জবাব জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী করেন।