রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে মাসিক পাঁচ লাখ টাকা কিস্তি দিতে গ্রিনলাইনের প্রতি দেওয়া আদালতের আদেশ আগামী রোববারের (২৮ জুলাই) মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
গ্রিনলাইনের নতুন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার (২১ জুলাই) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন রাফিউল ইসলাম রাফি। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
গত ১৫ জুলাই গ্রিনলাইনের আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেছিলেন, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আদেশ পালন না করায় আমি তাদের আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর আদালত আদেশের জন্য ২১ জুলাই দিন ঠিক করেছিলেন।
এর আগে, গত ২৫ জুন এক আদেশে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা মাসিক ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ওই অর্থ রাসেলকে দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
সম্প্রতি রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার আদেশের পাশাপাশি রাসেলের অন্যপায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছিল। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে ৩১ মার্চ বিফল হয় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ এক মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
পরে চিকিৎসার জন্য খরচ দিলেও অবশিষ্ট টাকা দেয়নি। এরপর ১৫ মে হাইকোর্ট ওই টাকা দিতে ২২ মে পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু এই সময়েও তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। এরপর আদালত এক মাস সময় দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন রাখেন। পরে ২৫ জুন আদালত কিস্তিতে টাকা শোধের আদেশ দিয়েছিলেন।