রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের হাইকোর্ট মশা মারতে আদেশ দেন না। আমাদের তা দিতে হয়।’
পাশাপাশি শুধু জনগণকে সচেতন না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মশানিধনে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার (২২ জুলাই) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ। এ সময় তিনি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এর ওপর শুনানি করেন।
প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, মশানিধনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ দিচ্ছে এবং নাগরিকদের সচেতন করে যাচ্ছে।
আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কীভাবে ওষুধ দিচ্ছেন? আমরা কি বাসায় থাকি না? মশার মেশিনের শব্দে আমাদের কান কি নষ্ট হয়ে গেছে? এসব তো আমাদের দেখার কথা না। যে ওষুধ দেয়, তাতে কি কাজ হয়? ওষুধে কাজ হয় না, তা মেয়র নিজেই বললেন। জনগণকে সচেতন করে তাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তাদের (সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের) কী দায়িত্ব?’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সচেতন করার কাজ করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার টায়ারে কিংবা বাসার টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেসব বিষয়ে তারা সচেতন করে যাচ্ছে।’
আদালত বলেন, ‘এসব বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আপনারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা জানান। দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদের কাজ করতে হবে। মশানিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে কিছু হয়েছে? কতজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, তার তথ্য দিন, তাহলে বুঝতে পারবো, আপনারা কাজ করছেন কিনা।’
আদালত উষ্মা প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের হাইকোর্ট মশা মারতে আদেশ দেন না। আমাদের তা দিতে হয়। যতই বলেন আর ছবি দেখান, তা বিশ্বাসযোগ্য হবে তখন, যখন হাসপাতালে মানুষ যাবে না। মশার বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালান। মশানিধন সিরিয়াসলি কেন হচ্ছে না? বরং আরও বাড়ছে?’
মশানিধনের প্রতিবেদনে শুধু জনসচেতনতার বিষয়টিকে প্রধান্য দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আদালত আরও বলেন, ‘জনগণ সচেতন আছে। আগে আপনারা (সিটি করপোরেশন) সচেতন হোন। আর না পারলে আপনারা একটি আবেদন নিয়ে আসেন, জনগণের ওপর সচেতন হওয়ার জন্য রুল জারি করি। মশানিধনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট করুন। আজকেও পত্রিকায় রিপোর্ট দেখেছি ডেঙ্গুতে কতজন মারা গেছে। মশানিধনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট করুন। সাংবাদিকরা কি তাহলে সব মিথ্যা লিখছেন? আমরা এই রিপোর্টে সন্তুষ্ট নই। শুধু জনসচেতনতা দিয়ে হবে না।’
এরপর আদালত এ মামলায় ঢাকার দুই সিটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তাদের সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।
এরআগে, গত ১৪ জুলাই ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে তথ্য জানাতে নির্দেশ দেন আদালত।
একইসঙ্গে নাগরিকদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে এবং এডিস মশা নির্মূলে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তাও জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাতে বলে মামলার শুনানির জন্য সোমবার (২২ জুলাই) তারিখ ধার্য রেখেছিলেন আদালত।