হাইকোর্ট

ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি জনসাধারণের সাধ্যের মধ্যে রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

বেসরকারি মেডিকেল, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফি নির্ধারণ এবং তা সবার সাধ্যের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরকারি হাসপাতাল যাতে বিনামূল্যে এ দুই রোগের পরীক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্ট বলেন, বেসরকারি মেডিকেল, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফি যেন ব্যয়বহুল না হয়, জনগণ যাতে সাধ্যের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় সে জন্য একটি ফি নির্ধারণ করে দিতে হবে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতাল যাতে বিনামূল্যে এ দুই রোগের পরীক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে কিনা এবং সরকারি হাসপাতাল ফ্রি করাচ্ছে কিনা তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির কাছ থেকে জানবেন।

‘ডেঙ্গু পরীক্ষায় অযৌক্তিক ফি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।

আদালতে প্রতিবেদনটি নজরে আনেন আইনজীবী মোশতাক আহমেদ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

পরে মোশতাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলো ৪/৫ গুণ বেশি ফি নিচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। ১৪৫ টাকার খরচ নিচ্ছে অনেক টাকা। কেউ ১৭’শ আবার কেউ ১৮’শ টাকা নিচ্ছে। এটা কোর্টের নজরে এনেছি। কোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছেন-আপনারা এটা জানবেন গতকালকে এটা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ফি এক্সাক্টলি কত হবে সেটা জানাবেন। আগামী সোমবার এটা জানাতে হবে। সঠিক ফি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে কি না এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজির কাছ থেকে জানবেন। সরকারি হাসপাতাল ফ্রি করাচ্ছে কিনা তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো বহুগুণ দাম নিচ্ছে এ অভিযোগ জাতীয় দৈনিকে এসেছে। আদালত বলেছেন-অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ করে আইন অনুযায়ী বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে কি না নিলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা জানাতে হবে।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। হাসপাতালে পৌঁছে মানুষ প্রথমেই জানতে চান, ডেঙ্গু হয়েছে কি হয়নি। ঠিক এই সুযোগটাই কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বেশি রাখছে। তাদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

সরকারি হাসপাতালে পেয়িং বেড ও কেবিন ছাড়া অন্য রোগীর ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, পেয়িং বেড ও কেবিনের রোগীদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে এই পরীক্ষা হচ্ছে বিনামূল্যে। কিন্তু কেবিনের রোগীদের জন্য এই পরীক্ষা ৮৫০ টাকায় করা হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

‘এনএস১’ নামের পরীক্ষায় সহজেই ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। শরীর থেকে রক্ত নিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। রাসায়নিক ব্যবহার করে রক্তে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। রক্ত নেওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানানো সম্ভব। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ছয়ঘণ্টা পর রক্ত নিলেও ফলাফল জানা সম্ভব।

চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের সভাপতি জানিয়েছেন, বাজারের সবচেয়ে ভালো কোম্পানির একটি কিটের দাম ১৪৫ টাকা।

তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এই পরীক্ষার জন্য বেশি টাকা নিচ্ছে। একটি বড় হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা আড়াই হাজার টাকা নিচ্ছেন। ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকার কিছু হাসপাতাল নিচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। ধানমন্ডির একটি হাসপাতাল কিছুদিন আগেও নিয়েছে ৭০০ টাকা। হঠাৎ তারা এ পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ করেছে। পান্থপথের একটি হাসপাতাল নিচ্ছে ১ হাজার টাকা।

সরকারের নজরদারির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আজ (বুধবার) সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগির এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা সব হাসপাতালে পাঠানো হবে। পরীক্ষা ফি যৌক্তিক সীমায় রাখতে হবে।’