আয়কর কর্তৃকপক্ষের নিকট একজন করদাতার বার্ষিক আয়ের তথ্যাবলী নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর রিটার্ন ফরম এর কাঠামো আয়কর বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। কারা, কখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে সাজা কি এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট এম এ বাশার আহমেদ।
আয়কর রিটার্ন কারা দাখিল করবেন
সাধারণভাবে, কোন ব্যক্তি করদাতার আয় যদি বছরে ২,৫০,০০০/- টাকার বেশি হয় তবে তাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। মহিলা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে ৩,০০,০০০/- টাকার বেশি হয়, প্রতিবন্ধী করদাতার আয় যদি বছরে ৪,০০,০০০/- টাকার বেশি হয় এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪,২৫,০০০/- টাকার বেশি হয় তাহলে ঐ করদাতাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ যা-ই হোক না কেনো করদাতাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে ব্যক্তি করদাতাকে সংশ্লিষ্ট আয় বছরের জন্য আবশ্যক ভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবেঃ
(১) যদি আয় বছরে করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে।
(২) আয় বছরের পূর্ববর্তী তিন বছরের যে কোন বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে।
(৩) করদাতা যদি-
- কোন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার এমপ্লয়ি হন।
- কোন কোম্পানির অংশীদার হন।
- সরকার অথবা সরকারের কোন কর্তৃপক্ষ কর্পোরেশন, সত্ত্বা বা ইউনিটের বা প্রচলিত কোন আইন, আদেশ বা দলিলের মাধ্যমে গঠিত কোন কর্তৃপক্ষ কর্পোরেশন, সত্ত্বা বা ইউনিটের কর্মচারী হয়ে আয় বছরে যে কোন সময় ১৬,০০০/- টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ মূল বেতন আয় করে থাকেন।
- কোন ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হন।
(৪) আয় বছরে করদাতার আয় কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য হয়ে থাকে।
(৫) যদি আয় বছরের কোন এক সময়ে নিম্নবর্ণিত শর্তের যে কোনটি করদাতার জন্য প্রযোজ্য হয়ঃ-
- মোটর গাড়ির মালিকানা থাকা (জীপ বা মাইক্রোবাস কে বুঝবে)।
- মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্য পদ থাকলে।
- কোন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হইতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে কোন ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা করলে।
- চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোন স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধন থাকলে।
- আয়কর পেশাজীবি হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধন থাকলে।
- কোন বণিক বা শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য পদ থাকলে।
- কোন পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কোন পদে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হলে।
- কোন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কোন স্থানীয় সরকারের কোন টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করলে।
- কোন কোম্পানির বা গ্রুপ অব কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদে থাকলে।
- রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থায় মোটরযান প্রদান করলে।
- মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নিবন্ধিত মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠান থাকলে।
- বাংলাদেশে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসায় আয় উপার্জনকারী অনিবাসী হলে।
কখন রিটার্ন দাখিল করতে হবে
ব্যক্তি করদাতাকে কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। ২০১৯-২০২০ কর বছরের জন্য ৩০শে নভেম্বর ২০১৯ তারিখ হচ্ছে কর দিবসের অর্থাৎ রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়। একজন ব্যক্তি করদাতা ১লা জুলাই ২০১৯ থেকে ৩০শে নভেম্বর ২০১৯ তারিখের মধ্যে ২০১৯-২০২০ কর বছরের রিটার্ন দাখিল করবেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব না হলে করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বিধি নির্ধারিত ফরমে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ পূর্বক উপকর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারবেন। সময় মঞ্জুর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে সাধারণ অথবা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ন দাখিল করা যাবে।
রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয়
কোন করদাতা আয়কর অধ্যাদশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে তাঁর উপর আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং ৭৩এ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে। যে ক্ষেত্রে করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করে উপ কর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করবেন সে ক্ষেত্রে করদাতার উপর জরিমানা আরোপিত হবে না তবে অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে।
লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা।