সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। রাজধানীর ভূতেরগলি এলাকায় রোববার বিকেলে (২৮ জুলাই) তাঁর বাসায় অভিযান চালায় দুদক
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিক ও জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে রোববার সকাল দশটা থেকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁদের দুদকের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিলেটে দায়িত্ব পালনের আগে চট্টগ্রাম কারাগারে দায়িত্ব পালন করেন পার্থ গোপাল বণিক। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁদের নিয়ে অভিযানে যায় দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে একটি দল। দুদকের দলটি ভূতেরগলি এলাকায় পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় বিকেলে অভিযান চালায়। ওই বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা এই অর্থ বাসায় রেখেছিলেন ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিক।
এদিকে ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে এখনো পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে জব্দ টাকার নম্বর টুকে শেষ করতে পারেননি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। আর পারবেনই বা কীভাবে? এ তো রাশি রাশি টাকা! জব্দ টাকার নম্বর টুকে রাখতে গতকাল বিকেল থেকে টানা কাজ করে চলেছেন তাঁরা।
গতকাল রোববার রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকার ভূতের গলির একটি বাড়ির সাততলায় পার্থ গোপাল বণিকের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পার্থ বণিককে আটক করে দুদক। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশির জন্য গতকাল সাড়ে তিনটায় বাড়ির সামনে যায় দুদক দল। তবে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। তখন থেকে জব্দ টাকার তালিকা তৈরির কাজ করে চলেছেন দুদক কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি নোটের নম্বর নথিভুক্ত করতে হচ্ছে তাঁদের। তাই এত পরিমাণ টাকার নম্বর টুকতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। টানা ১৬ ঘণ্টাতেও কাজ শেষ করতে পারেননি।
আজ সোমবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নম্বর নথিভুক্ত করার কাজ চলছে।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি জানান, আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নোটের নম্বর নথিভুক্ত করার কাজ শেষ হবে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার ডিআইজিকে আজ দুপুরের পর আদালতে হাজির করা হতে পারে।
দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ গতকাল জানান, দুদক বাড়িটিতে আসার পর পার্থ গোপাল বণিকের চিকিৎসক স্ত্রী রতনমণি সাহা পাশের ভবনের ছাদে ৫০ লাখ টাকাভর্তি বস্তা ছুড়ে মারেন। পরে বাড়ির দরজা খোলার পর ভেতরে গিয়ে দলটি ৩০ লাখ টাকা পায়। আর পাশের ভবনের ছাদ থেকে ৫০ লাখ টাকা তুলে আনা হয়। এসব নিজের বলে পার্থ গোপাল স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, ৫০ লাখ টাকা তাঁর নিজের সঞ্চয়। আর ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ির।
দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ডিআইজি প্রিজনস দুদকে তাঁর সম্পদের যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে এ অর্থ নেই। যে ফ্ল্যাটে তিনি থাকছেন, সেটা তাঁর শাশুড়ির নামে, যা তাঁর এক শ্যালিকা কিনে দিয়েছেন। অথচ ওই বাড়ি নির্মাণের পর থেকেই তাঁরা ওই ফ্ল্যাটে থাকছেন।
দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা এই অর্থ বাসায় রেখেছিলেন ডিআইজি প্রিজনস পার্থ।
দুদক সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে ভৈরব থেকে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে তল্লাশির একপর্যায়ে তাঁর দুটি ব্যাগ থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় উঠে আসে চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের নাম। এরপর দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে পার্থকে সিলেট বদলি করা হয়।