মঈদুল ইসলাম
আমলগ্রহণের এখতিয়ারবিহীন ম্যাজিস্ট্রেট কোন অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য পুলিশকে আদেশ দিতে পারেন কি ?
সম্প্রতি এ বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে, বাস্ততবার প্রয়োজনে আইন ছাড়াও কখনও কখনও কমনসেন্স দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় ! তাহলে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কি Court of Equity, নাকি Court of law ! যদি Court of law হয়ে থাকেন তাহলে দেখুন আপীল বিভাগ কী বলছেন – “A Court of law must follow the black letters of the statute while a Court of equity has the ability to do what is fare and equal.” [Bagladesh vs. Zafar Brothers ltd. 69 DLR (AD) 52 para 27] হাইকোর্ট বিভাগকেই, তাও রীটের ক্ষেত্রে বলছেন একেবারে আইনের কালো অক্ষরগুলো অনুসরণ করতে। সেখানে, ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা কোন অধস্তন আদালত কতখানি পারেন এই কালো অক্ষরের বাইরে যেতে ! আইনের বিধানকে পাশ কাটিয়ে অন্য কিছু করণীয় নেই। যা কিছুই করতে চান না কেন আইনের বিধান অনুসরণ করেই করতে হবে। অতি স্পর্শকাতরতা একজন বিচারকের অবশ্য পরিহার্য।
ম্যাজিস্ট্রেট যে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করে ব্যবস্থা নেবার আদেশ দেন তার কোন আইনি ভিত্তি আছে কি? সব ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রেই কি এ আদেশ দেয়া যায়? যে কোন ম্যাজিস্ট্রেটই কি এ আদেশ দিতে পারেন? যদি আইনি ভিত্তি হয় CrPC-র ১৫৬(৩) ধারা, তাহলে সব প্রশ্নেরই উত্তরই পাওয়া যাবে। এই ধারার বিধান হল –
“(3) Any Magistrate empowered under section 190 may order such an investigation as above mentioned.” দেখুন আমলগ্রহণের এখতিয়ারটি কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এখানে। উত্তরও সহজ হয়ে যায়। যার আমল গ্রহণের এখতিয়ার নেই, তার এ আদেশ দেবারও ক্ষমতা নেই। এখতিয়ার না থাকলে অভিযোগের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের করণীয় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে CrPC-র ২০১ ধারায়। দেখুন বিধানটি –
“201. Procedure by Magistrate not competent to take cognizance of the case–
(1) If the complaint has been made in writing to a Magistrate who is not competent to take cognizance of the case, he shall return the complaint for presentation to the proper Court with an endorsement to that effect.
(2) If the complaint has not been made in writing, such Magistrate shall direct the complainant to the proper Court.”
সুতরাং, আমলগ্রহণের এখতিয়ার না থাকলে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতটি দেখিয়ে দিয়ে অভিযোগকারীকে ছেড়ে দিতে হবে সেই আদালতের ওয়াস্তে। আর কোন সেন্স প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। বাকি যা কিছু প্রয়োগ সেই আদালতই করবেন।
পুনশ্চঃ ম্যাজিস্ট্রেট লিখিত অভিযোগ/নালিশ এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে পাঠাবেন না। দেওয়ানী মামলার আরজি ফেরতের মত করে লিখিত অভিযোগে/নালিশে “উপযুক্ত আদালতে দাখিলের জন্য ফেরৎ দেয়া হল” এরকম কিছু লিখে অভিযোগকারীর কাছে ফেরৎ দেবেন। তারপর সে তা নিয়ে গিয়ে সেখানে দাখিল করুক বা না করুক, ম্যাজিস্ট্রেটের আর কোন দায় নেই।
-লেখক: সাবেক সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল); ই-মেইল: moyeedislam@yahoo.com