সিটি করপোরেশনের পক্ষে মশা নিধনের ওষুধ আনতে লাইসেন্স নিতে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, অনুমোদন নিতে হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এবং ছাড়পত্র দরকার হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের। ওষুধ আনা নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর এমন ধাক্কাধাক্কি চলতে থাকলে দেশে মশা মারবে কে?—এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
সেই সাথে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলে যথাযথ ওষুধ কবে আনা যাবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষকে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (১ আগস্ট) মধ্যে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
মশা নির্মূলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম ও পদক্ষেপবিষয়ক শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে এই তথ্য জানাতে হবে।
আদালতে দক্ষিণ সিটির পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ ও উত্তরের পক্ষে আইনজীবী তৌফিক ইনাম শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল জায়েদী হাসান খান।
শুনানির একপর্যায়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষে মশা নিধনের ওষুধ আনতে লাইসেন্স নিতে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, অনুমোদন নিতে হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এবং ছাড়পত্র দরকার হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
তখন আদালত বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকার মশা মারবে সিটি করপোরেশন। এ ক্ষেত্রে ওষুধ আনা নিয়ে যদি মন্ত্রণালয়গুলোর এমন ধাক্কাধাক্কি চলতে থাকে, সারাদেশের মশা মারবে কে? আমরা নতুন ওষুধ ক্রয় নিয়ে কোনও দফতর বা বিভাগের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি দেখতে চাই না।’
ডিএনসিসির আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতকে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় সরকার দুই সিটি করপোরেশনকে নতুন ওষুধ এনে দিলে ভালো হয়। তাহলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না।’
দুই সিটির আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আমরা চাই যথাযথ ওষুধ ছিটানো হোক। কবে আনতে পারবেন। আপনারা জানাবেন। যা দাখিল করার তা হলফনামা আকারে দিয়ে বলবেন।’
শুনানির সময় আদালত বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (ডিএস) উপসচিবের স্ত্রী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে? নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার স্ত্রী মারা যায়, তারা জেগে ঘুমালে আমরা তো তাদের তুলতে পারব না।’
আদালত সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘ওষুধ কার্যকর হলে অধিকতর কার্যকর ওষুধ লাগবে কেন? যেটি আছে, সেটি কাজ করছে না? আপনার রাইফেল আছে, গুলি নেই। রাইফেলে গুলি না থাকলে কি কাজ হবে?’
তখন উত্তরের আইনজীবী বলেন, ওষুধে কাজ হচ্ছে।
পরে আদালত বলেন, ‘সরকার বলছে কার্যকর ওষুধ ছিটানোর কথা। যদি ওষুধ কার্যকরই হবে, তাহলে সরকার কেন বলছে?’
তখন আইনজীবী বলেন, ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে কার্যক্রম চলছে।
তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি একপর্যায়ে বলেন, ‘আপনারা বিষয়টি মোটেই সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। জবাবদিহি তো করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে আপনাদের সতর্ক করা হয়েছিল। আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিলেন না কেন?’
এ সময় আইনজীবী বলেন, তখন থেকে কার্যক্রম চলছে। এখন প্রকোপ বেড়েছে।
আদালত বলেন, ‘কাজ করলে প্রকোপ কেন বাড়বে? রুল দেওয়ার পর আপনাদের (সিটি করপোরেশনের) ঘুম ভাঙল। তখন কয়েক দিন উল্টাপাল্টা কথা বললেন। এখন সরকার ধমক দিয়েছে, আপনারা চুপচাপ।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাইনুল হাসানকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করছে। এ ব্যাপারে সরকার কী করছে? আমরা কি প্রত্যেক দফতরের লোকদের ডেকে এনে তাদের বক্তব্য শুনবো?’
জবাবে ব্যারিস্টার মাইনুল হাসান আদালতকে জানান, ‘ডেঙ্গু বর্তমানে যে আকার ধারণ করেছে, তাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রণে রাখার। এই প্রচেষ্টা গ্রহণ করা না হলে আরও বড় আকার ধারণ করতো। তবে পুরানো ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর নয়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।’
‘ডেঙ্গুতে মৃত্যু’ ও ‘রোগী ভর্তি’ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে এলে ১৪ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে ওঠে।