আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার সব সরকারি চুক্তিতে এডিআর বা সালিশ ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উপযুক্ত ধারা যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘টেকসই আর্থিক খাতের জন্য আর্থিক বিবাদসমূহ সমাধান কল্পে কার্যকর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া’ শীর্ষক সেমিনারে শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)।
সেমিনারে আইনমন্ত্রী বলেন, বিতর্কের তাৎক্ষণিক সমাধান ব্যবসা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং শিল্পে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। টেকসই আর্থিক খাতের জন্য আদালতে যাওয়ার আগে এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) পদ্ধতির প্রয়োগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মামলা-মোকদ্দমার আগে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশ ও মধ্যস্থতার প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আদালতের ওপর চাপ কমবে এবং এর ফলে মামলার জট হ্রাস পাবে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘসূত্রিতায় না জড়িয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছে। অর্থাৎ তারা বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি পরিবর্তন করা শুরু করেছেন এবং বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের সুবিধার্থে এডিআর পদ্ধতিগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেও বিরোধ নিষ্পত্তিতে সীমিত আকারে এডিআর পদ্ধতি বেশকিছু দিন ধরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটিকে আইনি কাঠামোতে আনতে শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশ, বিদেশি সালিশি রোয়েদাদ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য সালিশ সম্পর্কিত বিধান প্রণয়নকল্পে বাংলাদেশে ২০০১ সালে সালিশি আইন প্রণয়ন করে, যা বাংলাদেশকে আধুনিক সালিশ বা আরবিট্রেশনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন, দেওয়ানী কার্যবিধিসহ কিছু আইনে এডিআর এর বিধান যুক্ত করেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন এবং রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টেও সালিসের বিধান যুক্ত করেছে। শুল্ক, ভ্যাট, আয়কর ও শ্রম আইন মামলার সমাধানের জন্যও এডিআর চালু করা হয়ছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চূড়ান্ত কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা সত্ত্বেও, এডিআর-কে আধুনিক আকারে ব্যাপকভাবে অনুশীলন করা সম্ভব হয়নি।
আনিসুল হকে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা যারা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করছেন, তাদেরকে বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা অনুশীলনগুলোকে বাংলাদেশে প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক চুক্তি বা চুক্তিগুলোতে মধ্যস্থতা বা সালিশের বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং বিরোধের সময়ে এটিকে অবলম্বন করা হয়। তাই এডিআরকে কার্যকর করতে পারলে আমাদের দেওয়ানি আদালতের উপর চাপ কমবে। এডিআরের ওপর জোর দেয়া অব্যাহত রাখলে এটি অবশ্যই আমাদের বিরোধের দ্রুত সমাধানের একটি পদ্ধতি সরবরাহ করবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি উভয় আরবিট্রেশন অ্যাওয়ার্ড যাতে বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া সরকার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো চুক্তিগুলোতে সালিশের স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিতে উৎসাহিত করেছে। আমরা বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এটি করতে উৎসাহিত করব।
বিয়াকের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, থাইল্যান্ড আরবিট্রেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাসিত আসওয়াওয়াত্তাপরন, বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা পারমিতা দাসগুপ্তা, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইমন আস্কি, ব্যারিস্টার ড. খালেদ হামিদ চৌধুরী, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহ আলম সারওয়ার, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিয়াকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ এ. (রুমী) আলী সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য করেন।