সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনায় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। একইসঙ্গে রিটে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত ১০৫ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ৭০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া জনস্বার্থে এ রিট আবেদন করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন আইনজীবীদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধানের ১৯, ২২, ২৭, ২৮, ২৯ এবং ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
রিটকারী আইনজীবী আরও বলেন, এই বিষয়ে বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। চলতি সপ্তাহে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর, বার কাউন্সিল সচিব এবং ব্যারিস্টার আল মামুনসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ, পদোন্নতি, অপসারণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদিসহ সকল বিষয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশপাশি স্বতন্ত্র প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধিমালা লঙ্ঘন করে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রিট আবেদনে বলা হয়- সৎ, যোগ্য ও মেধাবীদের বাদ দিয়ে এবং পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বিবেচনা না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ১০৫ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে ব্যারিস্টার আল-মামুনের হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের সময়কাল চার বছর দুই মাস। যদিও আইনানুযায়ী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্টে ন্যূনতম পাঁচ বছর প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। ফলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ত্রুটিযুক্ত এই নিয়োগ বাংলাদেশ ল’ অফিসার অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩ এবং বাংলাদেশ ল’ অফিসার (সংশোধিত) আইন ২০০১ এর সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৯, ২২, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
আল-মামুন ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত ১০৫ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ক্রমিক নাম্বার ৯৯ থেকে ১০৫ পর্যন্ত (১০৪ নং বাদে) ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সন্দেহজনক। কারণ প্রজ্ঞাপনে এদের কারো হাইকোর্টে তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। ফলে এ সকল নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা ৫ বছর আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৭ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখা ১০৫ জনকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ২১ জুলাই ৭০ জনকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে।