রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে মামলাটির ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ১০৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বুধবার (১১ সেপ্টেন্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান তৎকালীন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মাসুদ জামান ও মাজহারুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
একইসঙ্গে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২ অক্টোবর (বুধবার) দিন ধার্য করেন আদালত।
সাক্ষী মাসুদ জামান আদালতে বলেন, আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হলি আর্টিজান হামলার প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাক্ষী ফাইরুজ মালিহার ও আল আমিন চৌধুরীর জবানবন্দি রেকর্ড করি।
এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলামও ঘটনার সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ভারতীয় নাগরিক ডা. সত্য প্রকাশের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে তারা তিন সাক্ষীরই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ জামান বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত। আর মাজহারুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলাও চালান জঙ্গিরা। এতে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন।
এরপর ৪ জুলাই গুলশান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
একই বছরের ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এ মামলার আসামিরা হলেন- হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন।
এর মধ্যে পলাতক মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে গত ১৯ জানুয়ারি গাজীপুর এবং শরিফুল ইসলাম ওরফে আব্দুস সবুর খানকে ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে হলি আর্টিজান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গির সবাই নিহত হন।
হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরীকে। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন তামিম। রায়হান কবির তারেক ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে আট সহযোগীসহ নিহত হন।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে সিটিটিসি’র জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা যান। হামলাকারীদের আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী নিহত হন ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে এক অভিযানে।
হামলার পরিকল্পনায় অন্যতম সহযোগী সরোয়ার জাহান মানিক ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযান চলাকালে পালাতে গিয়ে ভবনের পাঁচতলা থেকে নিচে পড়ে নিহত হন।
নুরুল ইসলাম মারজান ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সিটিটিসি ইউনিটের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক সহযোগীসহ নিহত হন।
বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান নিহত হন ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সিটিটিসি’র অভিযানে।