১৯৭৪ সালে সমুদ্র অঞ্চল আইন করেছিল সরকার। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা-সংক্রান্ত বিরোধ মিটে যাওয়ার পর দীর্ঘ ৪৫ বছর পর পুরনো আইন বদলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। এ পটভূমিতে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সমুদ্র অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন বিবেচনা করে এই আইন প্রণয়ন করতে চাই। এর প্রাথমিক খসড়া তৈরি হয়েছে এবং সরকারের ইচ্ছা সাপেক্ষে এটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে।’
তিনি জানান, ১৯৭৪ সালের আইনে ৯টি ধারা ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নতুন আইনের খসড়ায় ১১৬টি ধারা রাখা হয়েছে। এসব ধারার উপধারাগুলো সমুদ্রের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
খোরশেদ আলম বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্রসম্পদ আহরণ, দূষণ প্রতিরোধসহ বিদেশের সঙ্গে কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়— এই বিষয়গুলো নিয়ে আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা কাজ করছি।’
নতুন আইনে এর সবগুলো বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে খোরশেদ বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়ন এবং এজন্য আইনের পাশাপাশি জ্ঞানেরও প্রয়োজন আছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এক কেজি টুনা মাছের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ ডলার, কিন্তু এই খাতে বিনিয়োগ করছে না কেউ।
আবার স্পিরুলিনা—যা প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়— বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে পণ্য বানিয়ে বাংলাদেশেই বিক্রি করছে বলে তিনি জানান।
কী আছে নতুন আইনে
বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চল আইনের খসড়ায় রাষ্ট্রের জলসীমার বিস্তৃতি কতদূর হবে এবং ওই জলসীমায় দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচল কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তার বর্ণনা আছে। এছাড়া মহীসোপান, গভীর সমুদ্র এবং একচ্ছত্র অর্থনৈতিক আঞ্চল কী হবে এবং সেখানে সম্পদ কীভাবে আহরণ করা হবে, থাকছে তার দিকনির্দেশনা। এছাড়া নিরাপত্তাসহ অন্য কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে সেটির নির্দেশনা দেওয়া আছে নতুন আইনে।
একটি ধারায় বলা আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি ডুবোজাহাজ ও যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করতে পারবে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ যদি বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয় তবে সেটিকে জলসীমায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না।
আরেকটি ধারায় বলা আছে, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক বিমান এবং অ-বাণিজ্যিক উদ্দেশে পরিচালিত কোনও জাহাজ যদি বাংলাদেশের জলসীমায় ডুবে যায় তবে তা বাংলাদেশের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
সরকারের অনুমতি ছাড়া পারমাণবিক বা অন্য কোনও ধরনের বর্জ্য নিয়ে কোনও জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকতে পারবে না এবং কোনও ধরনের জাহাজ ক্ষতিকর বা অস্বাস্থ্যকর পদার্থ সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে পারবে না। যদি কোনও জাহাজ এর ব্যত্যয় ঘটায় তবে বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী বিচার হবে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ে সরকারের এখতিয়ার ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং অনুমোদন ছাড়া কোনও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
আরেকটি ধারায় বলা আছে, গবেষণা কার্যক্রমের অনুমতি পাওয়ার পরে গবেষণালব্ধ তথ্য সরকারকে দিতে বাধ্য থাকবে গবেষণা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান।
জলদস্যুতা, চুরি ও অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে কী করণীয় সে বিষয়ে পরিষ্কার নিদের্শনা থাকবে ওই নতুন আইনে। এছাড়া সমুদ্র সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায় এবং অন্য দেশগুলোর জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে নতুন আইনে।