শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধীয় পক্ষগণের সম্মতিতে তথা বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে পাওনাদারকে এক অর্থবছরে আট কোটি ২৫ লাখ টাকা আদায় করে দিয়েছে একটি সরকারি সংস্থা। এছাড়া সফল বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় পরবর্তীতে উপকারভোগীরা আদালত থেকে ২৪৩টি মামলা তুলে নেন।
আইন বিচার ও সংসদ বিচারক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা’ বিনামূল্যে দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ টাকা আদায় করে দিয়েছে।
সংস্থারটির বার্ষিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধী নিষ্পত্তি সারাবিশ্বে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধীয় পক্ষের সম্মতিতে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ায় বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি। বাংলাদেশে সূ-দীর্ঘকাল যাবত মীমাংসা মধ্যস্থতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদালত ব্যতীত আইন সম্মত কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব দৃশ্যমান ছিল না। আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জেলা লিগ্যাল এইড অফিস প্রথম আইন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান যা মীমাংসা বা মধ্যস্থায়র মাধ্যমে পক্ষগণের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে সংস্থার উদ্যোগে আইনমন্ত্রী ২০১৩ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ এর সংশোধনী বিল সংষদে উত্থাপন করেন। এটি পাস হওয়ার মাধ্যমে ২০১৩ সালের ৬২ নম্বর আইন বলে ২১(ক) ধারা এ আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা ২০১৫ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এ আইন ও বিধিমালার আলোকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মামলা দায়েরের আগে ও চলমান মামলায় উভয় ক্ষেত্রেই আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তির জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলা লিগ্যাল অফিসার বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ হাজার ৩৫৭ জন সুবিধাভোগীকে এডিআর এর সুফল দেওয়ার মাধ্যমে আট কোটি ২৫ লাখ দুই হাজার ২৭০ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে আদায় করে দেন। এছাড়া সফল বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় পরবর্তীতে উপকারভোগীরা আদালত থেকে ২৪৩টি মামলা তুলে নেন।
দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে।
এ আইনের আওতায় সরকার ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করে এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে।
সরকার জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিককারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকার দ্রুততম সময়ে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার উদ্দেশে এ সংস্থার আওতায় প্রতিষ্ঠিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে বিকল্পবিরোধ পদ্ধতি প্রয়োগ করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।