চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির এজেডএম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিন জেলা থেকে তিন জন প্রসেস সার্ভারকে আন্তঃজেলা বদলির চেষ্টা করেন তিনি। জাল স্বাক্ষর দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে তিন কর্মচারীর করা আবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও পাঠান তিনি।
ইতোমধ্যে এ অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে তাকে। আর তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম আদালতপাড়ায় চলছে তোলপাড়।
এজেডএম রেজাউল করিমকে নাজির পদ থেকে প্রত্যাহার ও কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র ঘোষ।
অভিযুক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির এজেডএম রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি কীভাবে যে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না! আপনি (প্রতিবেদক) এই তথ্য কোথা থেকে পেলেন? এ বিষয়ে কোনো নিউজ করার দরকার নেই।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন হজ পালন করতে এবার সৌদি আরব যান। তাই ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদ। এ সময় চলতি বছরের ৭ আগস্ট নাজির এজেডএম রেজাউল করিম ২৩৫/নেঃবি, ২৩৬/নেঃবি এবং ২৩৭/নেঃবি নম্বর স্মারকমূলে জেলা জজের স্বাক্ষর জাল করে তিন জেলার তিন প্রসেস সার্ভার ও অফিস সহায়ককে আন্তঃজেলা বদলি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর আবেদনপত্র পাঠান। জাল আবেদনে মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসেস সার্ভার মোহাম্মদ আব্দুল হাদী, খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল আদালতে কর্মরত অফিস সহায়ক রুবেল দেব এবং কুমিল্লা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত নৈশপ্রহরী মো. কামরুল হুদাকে চট্টগ্রাম জেলা আদালতে বদলির জন্য আন্তঃজেলা বদলির আবেদন পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টে। আন্তঃজেলা বদলির আদেশ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আব্দুল মজিদের স্কাক্ষর জাল করা বদলির নো অবজেকশন পত্র সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করলে সেখান থেকে আন্তঃজেলা বদলির আদেশপত্র মঞ্জুরকরত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজের কাছে মঞ্জুরিপত্র প্রেরণ করেন।
কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ হজ শেষে সম্প্রতি কর্মস্থলে যোগদানের পর এ সংক্রান্ত আদেশটি নিয়ে তার সন্দেহ হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আব্দুল মজিদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাইলে বিচারক মজিদ আন্তঃজেলা বদলি সংক্রান্ত কোনো নো অবজেকশন পত্রে স্বাক্ষর করেননি বলে জেলা জজকে জানান। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো আবেদনপত্রের সঙ্গে থাকা নো অবজেকশন পত্রে করা স্বাক্ষর ভারপ্রাপ্ত জেলা জজের নয় বলে জেলা ও দায়রা জজকে নিশ্চিত করেন। এর পরই বেরিয়ে আসে জেলা নাজির এজেডএম রেজাউল করিমের বিচারকের স্বাক্ষর জাল করার ভয়ঙ্কর জালিয়াতির ঘটনা। বিষয়টি ধরা পড়ার পর গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া নাজিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে তার (নাজির) বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৫ এর অধীন কেন আইনানুগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে লিখিত কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয় মর্মে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে নাজিরের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। তবে তিন জেলা থেকে তিনজনকে চট্টগ্রাম জেলায় বদলি করে আনার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে নাজির দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এই ভয়ঙ্কর জালিয়াতি করেছেন বলে আদালতসংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নাজির এজেডএম রেজাউল করিমের কাছে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে চুপ ছিলেন।