অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:
[মূলত বার কাউন্সিল পরীক্ষার্থীদের জন্য লেখা হয়েছিলো এই লেখাটি। কিন্তু একইভাবে জুডিসিয়ারি পরীক্ষার্থীদের জন্যও এটি প্রযোজ্য হতে পারে সামান্য ব্যতিক্রমসাপেক্ষে। আমি সামান্য সম্পাদনা করে এটি আবারো আপনাদের জন্য তুলে দিলাম।]
পরীক্ষা কিন্তু শুধুমাত্র পরীক্ষা হলের টানটান উত্তেজনাময় পরীক্ষার এক ঘণ্টা নয়। এর সাথে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা, সময়মতো পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারলেন কিনা, মাথাটা ফ্রেশ আছে কিনা – এর সবই বিবেচনার বিষয়। কেননা কোনো এক দুর্বিপাকে পড়ে আপনার একটি ভালো প্রস্তুতির পরীক্ষারও লেজেগোবরে দশা হইতে পারে।
পরীক্ষার কেন্দ্রে কিন্তু আপনি গেলেই আপনাকে ঢুকতে দেবে না। সাধারণত প্রধান ফটক বন্ধ রাখবে। পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে সেটা খুলে দেবে সম্ভবত। আপনি আপনার রোল নম্বরটি ভালোভাবে মিলিয়ে নিয়ে একাধিকবার নিশ্চিত হবেন যে, আপনি আপনার নির্ধারিত রুম নম্বর বা বিল্ডিং নম্বরটি সঠিকভাবে দেখেছেন কিনা। তারপরে কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসা করে করে, বিশেষ করে একই ভবনে বা কক্ষে অন্য যেসব পরীক্ষার্থীদের আসন বা সিট পড়েছে তাদের সাথে কক্ষটি খুঁজে বের করুন। প্রত্যাশিত কক্ষটি পেলে আবারো কক্ষের দরজার সামনে রোল নম্বরটি মিলিয়ে নিয়ে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করুন।
সিট খুঁজে বসে পড়ুন। সিট খুঁজে বসে পড়েই আশেপাশের নিকটতম পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রাথমিক পরিচয় যদি তৈরি করতে পারেন মন্দ নয়। সাধারণভাবে, কে কোন মেজাজের সেটাতো বোঝা সম্ভব নয়। এমসিকিউ পরীক্ষায় দেখাদেখি করার সুযোগ কমই থাকে। তবুও পরীক্ষার্থী মাত্রই নাছোড়বান্দা হয়, এটা আমরাও যেমন জানি, পরীক্ষার গার্ড হিসেবে থাকা সম্মানিত শিক্ষকরাও সেটা জানেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে যদি ৪/৫ নম্বর এগিয়ে রাখা যায় অন্য পরীক্ষার্থীদের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে, সেটা কিন্তু মন্দ নয়! 🙂
পরীক্ষার ওএমআর [OMR answer sheet] উত্তরপত্র পাবার সাথে সাথে সেখানে যত্ন করে মনোযোগ দিয়ে নিজের রোল নম্বর, রেজি নম্বর ইত্যাদির বৃত্তগুলো পূরণ করে ফেলুন। রোল নম্বরে ৮ টি ঘর থাকলে যাদের রোল ৫ টি সংখ্যাতেই শেষ তারা কিভাবে বৃত্ত পূরণ করবেন সে বিষয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকরাই জানিয়ে দেবেন।
পরীক্ষার মূল ১ ঘণ্টা
এবার আসি লাস্ট সিক্সটি মিনিটস এ! মূল পরীক্ষার ১ ঘণ্টা তথা উক্ত ৬০ মিনিট এর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সঠিকভাবে জয়লাভ করতে হলে কী কী করা দরকার আপনার? শেষ ৬০ মিনিটে তাহলে আপনার কী করা উচিত হবে কোন পদ্ধতিতে? আপনার যা উচিত হবে সেটা নিম্নরূপ হতে পারে –
১. উত্তর ধারাবাহিকভাবেই শুরু করবেন। ১ থেকেই শুরু করবেন। ধারাবাহিকভাবে এগোতে থাকবেন।
২. প্রথমে সেই প্রশ্নগুলোরই উত্তর পূরণ করবেন যেগুলো আপনি শতভাগ নিশ্চিত জানেন।
৩. কোনো প্রশ্ন এবং এর অপশন দেখে যদি মনে হয় যে, এই প্রশ্নটি একটু চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে, অথবা সামান্য কনফিউশন থাকে, তাহলে সেই প্রশ্ন স্কিপ করুন বা ছেড়ে দিন, কিন্তু সাথে সাথেই সেখানে একটা ছোট্ট সুবিধাজনক চিহ্ন বা গোল করে রাখুন প্রশ্নের নম্বরটি, যেন পরের দফায় প্রশ্নটিকে সহজে চিনতে পারেন বা বের করতে পারেন চট করে। এই প্রশ্নগুলো আপনি পরের দফায় উত্তর দেবার জন্য রেখে দিন।
৪. কোনো প্রশ্ন এবং এর অপশন দেখে যদি মনে হয় যে, আপনি এটার উত্তর একেবারেই দিতে পারবেন না, তাহলে সেটাও ছেড়ে দিন, কিন্তু সাথে সাথেই সেখানেও একটা চিহ্ন [অবশ্যই আগেরবারের চেয়ে ভিন্ন একটি চিহ্ন] দিয়ে রাখুন যেন আপনি তা সহজেই বের করতে পারেন। এগুলো সব শেষ দফায় শেষ মুহূর্তে উত্তর করবেন। না পারলে ছেড়ে দেবেন। সম্ভব হলে আশেপাশের অন্য পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা যদি নিতে পারেন তো মন্দ নয়।
৫. আমাদের পরামর্শমতো ধারাবাহিকভাবে শুরু করলেন, কিন্তু দেখা গেলো যে, প্রথম ১০ টি প্রশ্নের ভেতর মাত্র ২ টি প্রশ্ন আপনি নিশ্চিত জানেন, বাকীগুলো পারলেন না বা কনফিউশন আছে বা একেবারেই পারবেন না, কিংবা প্রথম প্রশ্নগুলো হয়তো সেই বিষয়ের যে বিষয়ে আপনার প্রস্তুতি সবচে’ দুর্বল – এরকম পরিস্থিতিতে একদমই ঘাবড়াবেন না। কারণ আপনার সামনে আরো ৯০ টি প্রশ্ন পড়ে আছে। অর্থাৎ কোনো ধরনের নার্ভাস হবেন না। যুদ্ধ শুরু হবার আগেই পরাজিত হবেন না।
৬. প্রথম দফায় আপনার শতভাগ জানা উত্তরগুলো একেবারে ১০০ নম্বর প্রশ্ন পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে শেষ করার পরেপরেই একটা গণনা করে নেবেন যে – আপনি এরকম কতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন। এই গণনা করতে আপনার ১ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়, কেননা কোন প্রশ্নগুলো আপনি ২য় ও ৩য় দফার উত্তর করবেন সেগুলোতো দাগানোই আছে। সেটা বাদ দিয়ে যেগুলোতে দাগানো নেই বা কোনো চিহ্ন দেয়া নেই সেগুলোইতো আপনি উত্তর করেছেন।
৭. যদি দেখেন যে, আনুমানিক ৬০ বা তার বেশি সঠিক উত্তর আপনি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছেন তাহলে আপনার যথেষ্ট কনফিডেন্ট হবার কথা। তবে ধরে নেবেন এই শতভাগ জানা উত্তরেও ভুল থাকতে পারে, বৃত্ত পূরণে ভুল হতে পারে, প্রশ্নের নম্বরে ভুল করে থাকতে পারেন – ইত্যাদি কারণে আরো ৫-৭ নম্বর কমিয়ে ধরাটা ভালো। তো, এইটুকু আপনার চান্স পাবার ব্যাপারে কিন্তু কোনো সেইফ বা নিরাপদ নম্বর কিন্তু হলো না। সেক্ষেত্রে ২য় দফার উত্তর [সামান্য কনফিউশন আছে বা একটু চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে এমন প্রশ্নসমূহ] করার সময় খানিকটা বেশি সময় নিয়ে হলেও সতর্কতার সাথে সঠিক উত্তর বাছাই করে উত্তর দেবেন এবং আবারো এমন প্রশ্নসমূহের উত্তর দেবার পর একটা রাফ গণনা করবেন যে, কতগুলো আরো সঠিক উত্তর যোগ করতে পারলেন। যদি এই ২য় দফায় আরো ১৫-২০ টি প্রশ্নের উত্তর কনফার্ম করতে পারেন তাহলেতো কথাই নেই। সোজা সেফ জোনে চলে গেলেন বা পাস করাটা তখন নিরাপদ ও নিশ্চিত হলো।
৮. ৩য় দফার জন্য চিহ্নিত করা অবশিষ্ট প্রশ্নগুলো আপনি কতটা রিস্ক নেবেন, কতটা ঝড়েবকে মারবেন নাকি একদমই টাচ না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে এটা আপনাদের স্ব স্ব বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম। আমাদের পরামর্শটি তবুও জানিয়ে রাখি – পারতপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ নম্বর আপনার নিজের বিবেচনায় কনফার্ম থাকলে একেবারে অজানা থাকা প্রশ্নগুলো টাচ না করাই ভালো। একেবারে না পারা প্রশ্নগুলোও উত্তর করার কিছু টেকনিক আছে। সেই টেকনিকসমূহ নিয়ে এখন আর বিস্তারিত আলাপের সুযোগ নেই। 🙂
৯. অনেকেই অন্য একটা বিরাট একটা বোকামী করে ফেলেন। অনেকে ভাবেন যে, আগে পেনসিল দিয়ে ওএমআর শিটের বৃত্তটি দাগ দিয়ে রাখেন এমনটা ভেবে যে, কলম দিয়ে সবশেষে পূরণ করবেন। এমনটা করা মহাবোকামী। এরকম অনেক পরীক্ষার্থীদের দেখেছি যারা শেষ মুহূর্তে বৃত্ত দাগিয়ে শেষ করতে পারেন না। আমাদের পরামর্শ হলো কোনোরূপ পেনসিল ওএমআর শিটে ব্যবহার না করে, যখন যে প্রশ্ন পারলেন, তৎক্ষনাৎ সেটি কলম দিয়ে দাগিয়ে কমপ্লিট করে ফেলা যেন দ্বিতীয়বার সেটিতে আর হাত দিতে না হয়। ভেরি সিম্পল।
আজ এটুকুই। আপনাদের সব্বার জন্য শুভকামনা আমার পক্ষ থেকে।
লেখক : আইনজীবী ও ‘আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুক’ এর রচয়িতা এবং ফাউন্ডার – juicylaw.com