ঘোষণা করা হয়েছে দশকের পর দশক ধরে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে অযোধ্যা মামলার রায়। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈইয়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন বিচারকের বেঞ্চ ভারত উপ-মহাদেশের এই উচ্চ ভোল্টেজ মামলার রায় দিলেন। রায়কে কেন্দ্র করে পুরো ভারতে বিরাজ করছে উত্তেজনা। ভারত উপমহাদেশ, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে।
ভারতের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় রায় দেয়ার কথা থাকলেও তা কিছুটা বিলম্বিত হয়। দেশজুড়ে সতর্কতার পাশাপাশি ওই ৫ জন বিচারকের নিরাপত্তা জেড-ক্যাটেগরিতে উন্নীত করা হয়েছে। তারা হলেন, প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈই। তিনি আসামের সন্তান। এ ছাড়া আছেন বিচারপতি এসএ বোবড়ে, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি আবদুল নাজির। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রথম প্রধান বিচারপতি। তিনি ১৯৭৮ সালে বার-এ যোগ দেয়ার পর আইনী চর্চা করেছেন গুয়াহাটি হাই কোর্টে এবং ২০০১ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। তাকে বদলি করা হয় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে। তাতে ২০১২ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসার আগে তিনি ওই দুটি রাজ্যের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার এই আইনী ক্যারিয়ারের মাধ্যমে তিনি বেশ কতগুলো ঐতিহাসিক মামলার সমাধান দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে এনসিআর। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ১৭ই নভেম্বর অবসরে যাওয়ার আগেই অযোধ্যা মামলার রায় দিয়ে যাবেন। শুক্রবার তিনি উত্তর প্রদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিচারপতি এসএ বোবড়ে
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসরে যাওয়ার পর আগামী ১৭ই নভেম্বর ভারতের নতুন প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা বিচারপতি শারদ অরবিন্দ বোবড়ে’র, যাকে সংক্ষেপে এসএ বোবড়ে বলা হয়। তিনি ২০০০ সালে বোম্বে হাই কোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে যোগ দেন। দু’বছর পরে তিনি মধ্য প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনি জন্ম নিয়েছেন মহারাষ্ট্রে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পান। এবার নতুন প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনি অবসরে যাওয়ার আগে এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন দেড় বছর।
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়
ভারতে সবচেয়ে বেশিদিন প্রধান বিচারপতি ছিলেন ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়। তার ছেলে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী তাকে ২০১৬ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দেন। এর আগে তিনি বোম্বে হাইকোর্ট এবং এলাহাবাদ হাই কোর্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। হাভার্ডে আইনশাস্ত্রে গ্রাজুয়েট বিচারপতি চন্দ্রচূড় বেশ কিছু রায়কে উল্টে দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাভিচার সংক্রান্ত আইন ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সংক্রান্ত রায়। আইনের পাশাপাশি তিনি ইউনিভার্সিটি অব মুম্বইয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল-এর কমপারেটিভ কনস্টিটিউশনাল ল এর ভিজিটিং প্রফেসর।
বিচারপতি অশোক ভূষণ
বিচারপতি অশোক ভূষণ তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৭৯ সালে। ২০০১ সালের এপ্রিলে তাকে বিচারকের পদে বসানোর আগে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে আইনি চর্চা করতে থাকেন। তাকে ২০০৪ সালের জুলাইয়ে কেরালা হাইকোর্টে বদলি করা হয়। কয়েক মাস পরে সেখানে ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির দায়িত্ব নেন। তাকে ওই আদালতের প্রধান বিচারপতি করা হয় ২০১৫ সালের মার্চে। ২০১৬ সালের ১৩ই মে তাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিচারপতি আবদুল নাজির
১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন বিচারপতি আবদুল নাজির। কর্নাটক হাই কোর্টে ২০ বছর এই চর্চা করেন। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের বছরেই তাকে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্ব নেন।