ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সেই সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার রায় ২৮ নভেম্বর ঘোষণা করবেন আদালত।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস্ সামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এদিন এ মামলায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারা (অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড), ২৯ ধারা (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি) এবং ৩১ ধারায় (আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড) মামলা করা হয়। এসব ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সর্বনিম্ন তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বলে জানান আইনজীবীরা।
এর আগে, পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেই। ইচ্ছাকৃতভাবে ঐ ভিডিও প্রচার করে তিনি প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ ভিডিও ভাইরাল হলে তা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারার অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ওসি মোয়াজ্জেমকে অভিযুক্ত করে গত ২৬ মে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঐ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বরখাস্তকৃত ঐ ওসির বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন। ৩১ জুলাই মামলার বাদি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে নুসরাতের মা, ভাই ও দুই সহপাঠী জবানবন্দি দেন।
সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা শেষে গত বৃহস্পতিবার আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেন মোয়াজ্জেম। বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ অভিযোগে যত বড়ো শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড়ো শাস্তি আমি পেয়ে গেছি। এ মামলার কারণে সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি অনেক। আমার ১৫ বছরের ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। আমি ১০টা খুন করলেও এত বড়ো সাজা হতো না। আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে আসামি মোয়াজ্জেমের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়া হবে না জানালে ট্রাইব্যুনাল বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রাখেন।
এদিকে মামলার বাদি ব্যারিস্টার সুমন বলেন, মোয়াজ্জেমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা এবং মহিলাদের জন্য থানাকে আরো নিরাপদ করতেই এই মামলা করেছি।