আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সাবেক তিনজন বিচারপতির তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত বলে দাবি করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
প্রেসক্লাবে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন কাঠামোর (খসড়া) প্রকাশ অনুষ্ঠানে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) তিনি এ তথ্য জানান।
শাহরিয়ার কবির বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নিয়ে আমরা গত বছরই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছি। যার সদস্য হচ্ছেন উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগের ৩ জন সাবেক বিচারপতি। তারা হলেন- বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। তদন্ত কমিশনের কাজ ছিল একটি রিপোর্ট তৈরি করা।
তিনি বলেন, কমিশন তদন্তের স্বার্থে তুরিন আফরোজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে ৩ বিচারপতি কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সেই সব সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে, ২৫ কোটি টাকার যে অভিযোগ করা হয় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তুরিন আফরোজ এমন কোনো কাজই করেননি, তুরিন আফরোজ একজন প্রসিকিউটর হিসেবে আসামীর সাথে দেখা করতে পারেন কি পারেন না বলে যে প্রশ্নটি উঠেছে এই বিষয়ে বিচারপতিগণ এই সিদ্ধান্তে তারা উপনীত হন যে, এই আইনের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের আমাদের যে ট্রাইব্যুনালের আইন সেই আইন অনুযায়ী একজন প্রসিকিউটরের আসামীর সঙ্গে দেখা করবার অধিকার রয়েছে। এটি আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এই দুটি বিষয়ে তারা তুরিন আফরোজকে নির্দোষ পেয়েছেন।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, তবে তারা একই সাথে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তুরিন আফরোজ একটি ভুল করেছেন। সেটা হলো, তিনি যদি চীফ প্রসিকিউটরের সম্মতি নিয়ে আসামীর সাথে দেখা করতে যেতেন তাহলে ভালো হতো। আমাদের কমিশন পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি এই ধরনের কাজে গেলে যেন চীফ প্রসিকিউটরের সম্মতি নিয়ে দেখা করেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রসঙ্গে শাহরিয়ার কবির বলেন, আইন মন্ত্রণালয় যে তদন্ত করেছেন সেই বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। সেটি তাদের ব্যাপার। তবে আমাদের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী উচ্চ আদালতের সাবেক ৩ বিচারপতি তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে কোনো ভিত্তি পাননি। তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
এদিকে গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত মন্ত্রণালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আসামির সঙ্গে তার কথোপকথনের সিডিও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে তুরিন আফরোজকে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হকের মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পান। পরে অভিযোগ উঠে, মামলার দায়িত্ব পেয়ে তিনি আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার কথা জানিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে বলেন। এ নিয়ে আসামি ওয়াহিদুল হকের কাছে ২৫ কোটি টাকা দাবি করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।
বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নজরে এলে তুরিন আফরোজকে এ মামলা থেকে প্রাথমিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত চলাকালে ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য মামলা থেকেও তাকে অব্যাহতি দেন চিফ প্রসিকিউটর। সবশেষ গত ১১ নভেম্বর ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের’ দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সরকার। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রজ্ঞাপন জারী করে।