ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিপুলসংখ্যক মামলার জট কমাতে সরকার বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বাড়িয়ে আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, ট্রাইব্যুনালগুলোয় যেসংখ্যক মামলা রয়েছে, তা একজন বিচারকের পক্ষে নিষ্পত্তি করা অসম্ভব। এর জন্য এখতিয়ারভুক্ত আদালত বাড়াতে হবে। বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বাড়িয়ে প্রচলিত আইনটি সংশোধন করা হলে ভূমি জরিপ বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে।
ভূমি জরিপ আইন (স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট-১৯৫১) সংশোধনে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। খসড়া অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালগুলোয় বিচারাধীন মামলা বিচারের এখতিয়ার দেওয়া হবে দেশের দেওয়ানি আদালতগুলোকে। ট্রাইব্যুনালের একজন যুগ্ম জেলা জজের পরিবর্তে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজরাও এখন এসব মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন।
আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বলেন, ‘বর্তমানে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একজন যুগ্ম জেলা জজ বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় নির্দিষ্ট বিচারক ছাড়া অন্য কেউ মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। ফলে বিপুলসংখ্যক মামলা প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকায় প্রতিটি মামলার শুনানির তারিখ দিতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পর পর। এ কারণে বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বাড়িয়ে আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। বিচারপ্রার্থীরা ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি অন্য আদালতে যাওয়ার সুযোগ পেলে তাদের দুর্ভোগ কমবে। মামলাগুলোও দ্রুত শেষ হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘ভূমি জরিপ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বাড়িয়ে আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। এত দিন এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে মানুষ নির্দিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনালে যেত। এতে ট্রাইব্যুনালে মামলার চাপ বিপুলভাবে বাড়ে। কোনো কোনো ট্রাইব্যুনালে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মামলা পর্যন্ত রয়েছে। এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত বাড়ানোয় এ সমস্যার সমাধান হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যানে দেখা যায় (৩০ জুন পর্যন্ত), দেশের ৪৫টি ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালে তিন লাখ তিন হাজার ৩৫টি ভূমি জরিপ ভুল সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ১৪৫টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ঝুলে আছে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৮৮ হাজার ৫০৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ হাজার ১৩৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১০ হাজার ৯১১টি, খুলনা বিভাগে ৪৯ হাজার দুটি, বরিশাল বিভাগে ১৫ হাজার ৪৪টি, সিলেট বিভাগে ১৫ হাজার ৪০৬টি, রংপুর বিভাগে ১১ হাজার ৫৪০টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭২ হাজার ৪৮৮টি মামলা বিচারাধীন। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে ১৬৮টি মামলা।
জেলা হিসেবে কিশোরগঞ্জে সর্বাধিক ভূমি জরিপ মামলা বিচারাধীন। এ জেলায় ৪৩ হাজার ৩১টি মামলা রয়েছে। আর সবচেয়ে কম ৪৮০টি মামলা রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলায়।
২০০৪ সালে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট-১৯৫১ সংশোধন করে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করা হয়। আইন অনুযায়ী ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিক প্রতিকার পেতে ওই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ভূমি জরিপের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এক বছর পর্যন্ত সময়ে এ মামলা করা যায়। উপযুক্ত কারণ দর্শিয়ে অতিরিক্ত আরো এক বছর সময় নিতে পারেন জমির মালিকরা। ভূমি জরিপের ভুলত্রুটির প্রতিকার পেতে ২০০৪ সালে আইন সংশোধন করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরো বাড়ায়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল ৪৫টি। সূত্র: কালের কণ্ঠ