ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও মামলার রায় লেখার বিষয় বিবেচনার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলায় রায় লেখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মামলার রায় লেখা হয় শুধু ইংরেজি ভাষায়, তাতে অনেক সময় আমাদের সাধারণ মানুষ যারা হয়তো ইংরেজি ভালো বোঝেও না, তারা কিন্তু ধোকায় পড়ে যায়। তারা সঠিক জানতে পারে না যে রায়টা কী হলো। সেজন্য ইংরেজিতে লেখা হোক কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় লেখা থাকা উচিত।’
এসময় বিচারকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জনগণ এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন। সবাই যেন বিচার পায় সে ব্যবস্থা করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নুসরাত হত্যাসহ সম্প্রতি বেশকিছু চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচার দ্রুত হওয়ায় বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতিকে একটি সংবিধান দিয়েছেন। সে সংবিধানে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারের কথা বলা আছে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং আইনের কথা স্পষ্ট করে বলে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। একের কাজে অন্যের হস্তক্ষেপ শান্তি ও ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আসামি আনা-নেয়ায় ঝুঁকি কমাতে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপনের চিন্তা রয়েছে সরকারের।
তিনি বলেন, ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ এই প্রতিপাদ্যে আজকের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিপাদ্যটি খুবই যুগোপযোগী। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত ছিল।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল। দেশে ফিরে আমি মামলা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। তখন এমন একটা শাসন ছিল যেন খুনিদের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তারা রাজাকার-আলবদর-আলশামস খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভোট চুরি করে তাদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসানো হয়েছে। আমরা যারা বাবা-মা হারিয়েছি তারা বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু বিচার পাইনি। ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো তখন আমরা বিচারহীনতার প্রথা বাতিল করি। দেশের মানুষ যেন বিচার পায় সে ব্যবস্থা করি। পঁচাত্তরের পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন তাদের অবৈধ বলে রায় দেওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিচারপতিদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন, এসব রায়ের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সবার সমান। মামলাজট যাতে কমে যায় সাধারণ মানুষ যেন বিচার পায় সেজন্য বিচার বিভাগের উন্নয়নে আমরা অনেক কাজ করে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা আদালতে বিচার পরিচালনার জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিয়েছি এবং আরো অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। গাড়ি এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলোও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি ও সচিব গোলাম সরোয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আকবর।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্টের বিচারপতি এবং সারাদেশ থেকে আগত বিচারকরা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।