রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিপ্রায়ে সংঘটিত নৃশংস অপরাধে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) জবাবদিহিতার প্রচেষ্টার সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, নেদারল্যান্ডসের হেগে পিস প্যালেসে গত ১০-১২ ডিসেম্বর এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদালতকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমারের অভিযুক্ত দোষীদের দায়মুক্তির চলমান সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওআইসির ৫ সদস্যের পক্ষে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানিতে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলো। প্রতিনিধি দলের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান যোগ দেন। গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমারের মামলার শুনানি ১০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্বর শেষ হয়। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ান আইনজীবীদের আইসিজে ১৫ জন বিচারকের কাছে তাদের মামলা উপস্থাপনের মাধ্যমে শুনানি শুরু করেন। ১১ ডিসেম্বর অং সান সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের প্রতিনিধি তার উপস্থাপনা দেন। ১২ ডিসেম্বর সকালে গাম্বিয়ান আইনজীবী আদালতে অং সান সুচি এবং তার আইনি দলটির উপস্থাপনাগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। একই দিন বিকেলে মিয়ানমার চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তি দেয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা সঙ্কট, নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদায় জোর করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। প্রতিনিধি দল জবাবদিহিতা এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির মধ্যে গুরুত্ব দেয়।
আদালতের উপস্থিতির পাশাপাশি পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক আইসিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি একদল আইএনজিও আয়োজিত ‘রাইট টু রিপ্লাই’ অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। অনুষ্ঠানে তিনি কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইভেন্টে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কক্সবাজারের শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মন্তব্যও জানানো হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ান আইন ও বিচারমন্ত্রী এবং আইনজীবীদের দল এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে কানাডার বিশেষ দূত বব রায়ের সম্মানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া যৌথভাবে আয়োজিত একটি সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। এ সময় বব রায় রোহিঙ্গাদের প্রতি উদারতার জন্য বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খোলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (এশিয়া-প্যাসিফিক) মাসুদ বিন মোমেন, অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান, ইরানের নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গাওসুল আযম সরকার, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ।