গ্রামীণফোনের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর রাষ্ট্রপতিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, এই নোটিশে ১২ হাজার কোটি টাকার পাওনার বিষয়টি নিয়ে সালিস (আরবিট্রেশন) চাওয়া হয়েছে। নইলে টেলিনর আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
উকিল নোটিশের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তা অবহিত করা আছে এবং ফরেন মিনিস্ট্রিসহ সবাই এই বিষয়টি জানে। আমরা আমাদের আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। এই উকিল নোটিশটি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। তার কারণটা হচ্ছে, তারা চাচ্ছে আরবিট্রেশন যেন করা হয়। আরবিট্রেশন করার জায়গা দিয়ে তো আমরা উন্মুক্ত হয়েই আছি। কিন্তু বাংলাদেশের আদালতে মামলা থাকলে, আমার তো আদালতের বাইরে আরবিট্রেশন করার কোনো সুযোগ নাই। আমার আদালত যদি আমাকে আরবিট্রেশন করার জন্য হুকুম দেন আমি আরবিট্রেশন করতে পারব।’
টেলিনরের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, কোনো দেশে বিজনেস করে সেই দেশের আইন আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের কোর্টে যে অবস্থা আছে, সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি আমরা সঠিক পথে আছি। এবং আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে সেই নির্দেশনা বরং আমরা আরও নমনীয় পর্যায়ে যাওয়ার চিন্তা করছি, তার চাইতেও আদালত তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকারভাবে দেখিয়েছে। দেশের জনগণের অর্থ জাতীয় সম্পদ এটি আদায় করতেই হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনকে আপাতত দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আগামী ৩ মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় গ্রামীণফোনের কাছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর হাইকোর্টের জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করেন আদালত।
প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি (বিটিআরসির ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ও এনবিআরের ৪ হাজার ৮৬ কোটি) টাকা পাওনা হিসেবে দাবি করে গ্রামীণফোন লিমিটেডকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। ওই পাওনা দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে গ্রামীণফোন নিম্ন আদালতে একটি মামলা করে ও পাওনা দাবির অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায়। গত ২৮ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের পক্ষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। এর গ্রহণযোগ্যতার শুনানি নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং ওই অর্থ আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আবেদন করে, যা চেম্বার বিচারপতির আদালত হয়ে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আসে। আপিল বিভাগ শুনানিতে বিটিআরসির পাওনা দাবির প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন এখন কত টাকা দিতে পারবে, তা জানতে চেয়েছিলেন।