আইনজীবীদের ব্যক্তিগত স্বার্থের বদলে আদালতের প্রতি কর্তব্য ও মক্কেলের প্রতি সেবার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, “এ পেশায় শুধু আইনের ওপরই দখল থাকলে চলবে না। পেশাগত আচরণ সুন্দর হতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন চত্বরে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ আইন সমিতির ৩৪তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আইন পেশাকে সারা বিশ্বে একটি মহান পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী ও সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের সমাগম ঘটে। এ পেশা একটি আন্তর্জাতিক পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “এ পেশায় শুধু আইনের ওপরই দখল থাকলে চলবে না। পেশাগত আচরণ সুন্দর হতে হবে। সর্বোপরি অবশ্যই তাকে সৎ হতে হবে, এবং উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে। কোনো বিচার নিষ্পত্তির সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আর এ কারণে ব্যক্তিগত স্বার্থের চাইতে আদালতের প্রতি কর্তব্য ও মক্কেলের প্রতি সেবার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।”
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিচারক, আইনজীবী ও আইনের শিক্ষার্থীদের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। আইনজীবীরা হচ্ছেন সোশাল ইঞ্জিনিয়ার। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আইনজীবীদের রয়েছে অনন্য অবদান।”
তিনি বলেন, একজন আইনজীবীর জীবন কখনই মসৃণ হয় না। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখড়ে উঠতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, নিয়মাবর্তিতা, ধৈর্য্য, সততা, পরিশ্রম ও নিরন্তর অধ্যাবসায়।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, “প্রতিটি মামলা পরিচালনায় তার শিক্ষা, মেধা ও বিচক্ষণতা প্রয়োগ করতে হবে। জেনেশুনে মামলার ঘটনার বিকৃত উপস্থাপন করা একজন আইনজীবীর কখনোই উচিত নই। সঠিক সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আইনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আদালতকে সহায়তা করা হবে তার মূল উদ্দেশ্য।”
আইন পেশার মর্যাদা রক্ষা করতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে বেঞ্চ ও বারকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য নবীন আইনজীবীদের নিরন্তর অধ্যায়ন করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিচারপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিচারক, আইনজীবী ও আইনের শিক্ষার্থী, মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্যরা তাদের পেশাগত জীবনে উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে এবং দেশ গঠন এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালিত হবে।
সে বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুকে মরেণোত্তর ডক্টর অব লজ ডিগ্রিতে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সত্যি প্রশংসনীয়।”
আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম আফজাল-উল-মুনীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী।
অন্যদের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রধান বিচারপতির স্ত্রী আইন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিনা খালেক, সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, সাবেক সভাপতি এস এম মুনির বক্তব্য দেন।
এর আগে বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহা. মাহফুজুর রহমান আল মামুন।