সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটিতে (ওএসডি) রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, সরকারের ক্ষমতা আছে ওএসডি করে রাখার—এটি সঠিক। কিন্তু ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি রাখা বেআইনি।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার (৯ জানুয়ারি) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
ঘোষিত রায়ে হাইকোর্ট যেসব কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে নিজ নিজ পদে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫০ দিনের বেশি ওএসডিতে থাকা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইন অনুসারে কমিটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল অবন্তী নুরুল।
রায়ের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী অনীক আর হক গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত হিসাব অনুসারে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডিতে থাকা কর্মকর্তার সংখ্যা ৭৯৫ জন। ১৫০ দিনের বেশি বা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হলে তাঁরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন বলে রায়ে এসেছে। জনগণের আয়করের টাকায় তাঁদের বেতন হয়ে থাকে। সুতরাং সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁদের ক্ষেত্রে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ নীতির পরিপন্থী।
তবে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ওএসডি করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে বলে রায়ে এসেছে। তবে ১৫০ দিনের বেশি কাউকে ওএসডি রাখা যাবে না বলে রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে।
এর আগে, ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সালের ৩১ মে জনস্বার্থে সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ হাইকোর্টে ওই রিটটি করেন।
২০১২ সালে করা ওই রিটের ভাষ্য, ১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি রাখা যায়, সে বিষয়ে এবং এর সময়সীমা বলা আছে। কিন্তু অনিদিষ্টকালের জন্য ওএসডি রাখা হচ্ছে, তা বেআইনি। অনেক কর্মকর্তাকে কোনো কারণ ছাড়াই চিঠি দিয়ে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ভোগ করতে পারবে না। যাঁদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, তাঁরা কোনো দায়িত্ব ছাড়া সরকারের কাছ থেকে বেতন ভোগ করছেন। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হয়। এটা জনস্বার্থ ও সংবিধান পরিপন্থী। কারণ, সংবিধানের ২৭ ও ৪৪ অনুচ্ছেদে সমতার কথা বলা আছে। একজন করদাতা হিসেবে যেকোনো ব্যক্তিরই অধিকার রয়েছে তাঁর প্রদত্ত কর যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।
এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৪ জুন হাইকোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে কোনো দায়িত্ব ছাড়া কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন দেওয়া কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল বুধবার রায় দেওয়া হয়।