মুহঃ মাসুদুজ্জামান:
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে সিভিল মামলা ও ক্রিমিনাল মামলা নিষ্পত্তিতে এত দীর্ঘ সময় লাগছে কেন এবং ক্রিমিনাল মামলায় শাস্তির হার এত কম কেন বা এত আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর খুব কঠিন। একটা বিষয় পরিস্কার করি- আমাদের দেশের সিভিল ও ক্রিমিনাল মামলা পরিচালিত হয় ১৫০ বছর আগের ব্রিটিশদের প্রণীত আইন দ্বারা! ভাবুনতো ব্রিটিশদের মত সভ্য ও আইন মান্যকারী দেশ তাদের নিজেদের জন্য যে আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল তা অর্থাৎ উক্ত বৃটিশ আইন ও বিচারপদ্ধতি আমাদের মত ৩য় বিশ্বের অনুন্নত, অসৎ, অশিক্ষিত, আইন অমান্যকারী অসভ্য জনগণ তথা রাষ্ট্র গ্রহণ করেছে! বলুনতো এদেশের পুলিশ, আইনজীবী, ভূমি অফিস, ডাক্তার, বিচারক, কোর্ট স্টাফ, বিচার প্রার্থী জনগণ তথা সরকার ব্যবস্থা কী বৃটিশমানের! অর্থাৎ বৃটিশদের তৈরী আইন বৃটিশদের মত ১ম শ্রেণীর উন্নত সভ্য শিক্ষিত পাংচুয়াল আইনমান্যকারী ভদ্র লোকদের জন্য! আমাদের পুলিশি দীর্ঘকালীন প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত ব্যবস্থা, আমাদের ডাক্তারী প্রশ্নবিদ্ধ মেডিক্যাল রিপোর্ট, আমাদের জবাবদিহীতাবিহীন উকিলি সিস্টেম তথা প্রশ্নবিদ্ধ প্রসিকিউশন, আমাদের দুর্নীতিযুক্ত ভূমি ব্যবস্থা, কোর্ট স্টাফদের প্রশ্নবিদ্ধ নিম্নমান, বিচারকদের অতি স্বল্পতা তথা অজ্ঞ আপোষহীন ও সুবিধাবাদী জনগণ- তাহলে এদেশে স্বল্প সময়ে মানসম্মত বিচার বা সঠিকভাবে অপরাধ প্রমাণ ও অপরাধীর শাস্তি কীভাবে নিশ্চিত হবে!?? সর্বক্ষেত্রে অনৈতিকতা, অসততা, অসময়ানুবর্তিতা ও যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগহীনতা- তাহলে স্বল্প সময়ে প্রকৃত ন্যায়বিচার কীভাবে হবে?!! জনগণ ১৭ কোটি অথচ বিচারক মাত্র ১,৭০০ জন! দেশের প্রচলিত আইন, বিচারপদ্ধতি ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার মানসিকতার ব্যাপক সংস্কার ও জবাবদিহিতার আশু প্রয়োজন। আর বদলে যাওয়ার সর্বোত্তম প্ল্যাটফর্ম হতে পারে জাতির জনকের জন্ম শত বার্ষিকী। মুজিববর্ষ হোক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। তা না হলে…
লেখক: সিনিয়র সহকারী জজ