বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ যুক্ত করার সময় এসেছে।
‘আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যবহার’ নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে মার্কিন দূতাবাস ও যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে চার দিনের এই কর্মশালা শুরু হয়েছে।
এই কর্মশালায় বাংলাদেশের বিচারক ও কৌঁসুলিরা অংশ নিচ্ছেন। এতে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন হালনাগাদ করা এবং আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যবহারকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগে সহায়তা দেওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এক শ বছরের বেশি পুরোনো সাক্ষ্য আইন হালনাগাদ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ১৮৭২ সালের ওই আইন এখন পর্যন্ত বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে একুশ শতকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের প্রেক্ষাপটে এ আইনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাঁর মতে, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ চালুর ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দূর করা গেলে বিচারক ও তদন্ত কর্মকর্তাদের কাজে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে সাক্ষ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অডিও ভিজ্যুয়াল যন্ত্রপাতিকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, সিডি, ডিভিডি, হার্ডডিস্ক মেমোরি কার্ড, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশন, ইনস্ট্যান্ট চ্যাট মেসেজ, এমএমএস কম্পিউটার জেনারেটেড ডকুমেন্টস সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দুটিই সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের প্রতি সমর্থন রয়েছে উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন, বিচারকাজে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালত অঙ্গনে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কারণ, এটি কৌঁসুলি ও বিচারকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবে। এ ছাড়া এটি দ্রুততম সময়ে অপরাধের বিচার নিষ্পত্তি করা এবং মামলাজট কমাতে সহায়ক হবে।
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হলে তা বিচার প্রশাসনের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
কর্মশালাটি পরিচালনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কেন্দ্রীয় বিচারক ও তিনজন সরকারি কৌঁসুলি, যুক্তরাজ্যের একজন ফৌজদারি বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক। বিশেষ পরিস্থিতিতে বর্তমানে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুমোদিত, এমন কিছু ট্রাইব্যুনাল থেকে আমন্ত্রিত বিচারক ও কৌঁসুলিরা এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এবং পরিকল্পনাধীন মানব পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনাল।
কর্মশালায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের গ্রহণযোগ্যতার বর্তমান অবস্থা, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও আদালতে উপস্থাপনের জন্য বিধিমালা, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ সম্পর্কিত আপিলবিষয়ক উদ্বেগ এবং ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতামত চিহ্নিতকরণ ও উপস্থাপন।