আইনজীবীদের সই জাল করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে এফিডেভিট করা হচ্ছে- এমন অভিযোগে আইনজীবী ও সরকারি কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর, মারপিটে জখম হন কয়েক জন আইনজীবী ও সরকারি কর্মী। আইনজীবী প্রীতম সরকার এবং সরকারি কর্মী শিবনাথ দাসের আঘাত গুরুতর। প্রীতমের পায়ে ও শিবনাথের চোখে আঘাত লেগেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনজীবীরা ঘটনার প্রতিবাদে আদালত এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করেন। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, ‘‘আমরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
ঘটনার সময়ে মহকুমা শাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় অফিসে ছিলেন না। পরে তিনি বলেন, ‘‘আদালত চলার সময়ে আমার অফিসে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। সরকারি কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।’’
ভাঙচুর-মারধর কারা করলেন এমন প্রশ্নে মহকুমা শাসক অবশ্য সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা অফিসে ঢুকেছিলেন, তাঁরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁরা আইনজীবী কিনা, তা নিয়ে বার অ্যাসোসিয়শনের সঙ্গে কথা বলব। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আইনজীবীদের অভিযোগ, পাঁচ মাস ধরে বনগাঁ মহকুমা শাসকের অফিসে থাকা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে আইনজীবীদের সই জাল করে এফিডেভিট করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁদের কাছে ওই বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ এসেছে। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত আইনজীবী সমীরণ মাহাতো, ক্ষিতিমোহন কর্মকার, মনোজ সাহা, রথীন সেনের সই জাল করা হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এফিডেভিট করতে হলে আইনজীবীর স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। তাঁরাই আবেদনকারীকে শনাক্ত করেন। মূলত দলিল, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডে নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করতে বা নাম, বাবার নাম ভুল থাকলে মানুষ এফিডেভিট করান।
আইনজীবী সমীর বলেন, ‘‘সম্প্রতি এনআরসি-আতঙ্কের ফলে মানুষের মধ্যে এফিডেভিট করার প্রবণাতা বেড়েছে। বনগাঁ মহকুমায় একটি দালাল চক্র এ ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারাই গ্রামে গ্রামে মানুষকে এফিডেভিট করাতে নিয়ে আসছে।
আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টের কর্মীদের কারও কারও সঙ্গে দালালদের যোগাযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি চক্র তৈরি হয়েছে। তারাই আইনজীবীদের বাদ দিয়ে নকল সই করে এফিডেভিট করিয়ে দিচ্ছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁরা বুধবার দুপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন। তিনি সে সময়ে অফিসে ছিলেন না। অভিযোগ, এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আইনজীবীরা কথা বলছিলেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেট আপত্তিকর কথা বললে উত্তেজনা ছড়ায়।
অভিযোগ, সে সময়ে বাইরে থেকে এক যুবক এসে মোবাইলে আইনজীবীদের ছবি তুলতে থাকেন। শুরু হয় বচসা। তা থেকে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি, মারপিট বেধে যায়। দু’পক্ষের কয়েক জন কমবেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যদিও সমীর বলেন, ‘‘ভাঙচুর করা হয়নি। ধাক্কাধাক্কির সময়ে চেয়ার-টেবিল উল্টে গিয়ে থাকতে পারে।’’
এ দিন মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে দেখা গেল, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে চেয়ার-বেঞ্চ উল্টে পড়ে। বাইরে পুলিশ পাহারায় রয়েছে। সরকারি কর্মীদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। তাঁরা জানালেন, আইনজীবীরা কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়াই তাঁদের মারধর এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেছেন।
আইনজীবীদের সই জাল করার বিষয়ে মহকুমাশাসক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও পক্ষ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।