আকাশপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত এবং ব্যাগেজ নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে একটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগে এই মৃত্যু বা আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। এখন এই আইনের খসড়ায় এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২০ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০’এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আকাশপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং ব্যাগেজ নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ওয়ারশ কনভেনশন-১৯২৯ এর আলোকে আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার অ্যাক্ট, ১৯৩৪, দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন) অ্যাক্ট, ১৯৬৬ এবং দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (সাপ্লিমেন্টারি কনভেনশন) অ্যাক্ট ১৯৬৮ আইন আছে।
এই তিনটি আইনের আলোকে প্রাণহানি, আঘাত ও ব্যাগেজ বা কার্গো বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই নগণ্য ছিল এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি সময় সাপেক্ষ ছিল। এ কারণে ২০১৭ সালে নেপাল প্লেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯৯ সালে মন্ট্রিল কনভেনশন গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ উক্ত কনভেনশনে ১৯৯৯ সালেই স্বাক্ষর করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৯৯ সালে মন্ট্রিল কনভেনশন গ্রহণের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশে তা রেটিফিকশন করা হয়নি। মন্ট্রিল কনভেনশনটি রেটিফিকশন করে নতুন আইন প্রণয়ন করলে মুত্যু, আঘাত ও মালামাল হারানো বা নষ্ট হবার ক্ষেত্রে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ হবে।
মন্ট্রিল কনভেনশনের রেটিফিকশন এবং যাত্রী মৃত্যু, আঘাত ও মালামাল নষ্ট বা হারানোর ক্ষতিপূরণ দেওয়া সহজীকরণের জন্য মন্ট্রিল কনভেনশনের আলোকে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন, ২০২০’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ট্রিল কনভেনশন রেটিফিকশন করে প্রণীত খসড়া আইনটি অনুমোদিত হলে যাত্রী মৃত্যু বা আঘাত, ব্যাগেজ ও কার্গো ক্ষতি বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের হার পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, আগে মৃত্যু বা আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণ ছিল আড়াই লাখ ফ্রাঙ্ক বা ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। এখন আইনের খসড়ায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৪ ডলার বা এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা।
ফ্লাইট বিলম্বের কারণে পরিবহনকারীর দায় ২০ ডলারের পরিবর্তে পাঁচ হাজার ৭৩৪ ডলার। ব্যাগেজ বিনষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে এক হাজার ৩৮১ ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় এই অঙ্ক দাঁড়াবে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৪১ টাকা। আর কার্গো বিনষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে আইনে হবে ২৪ ডলার।
যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এ আইনের বিধানাবলী মোতাবেক ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ পক্ষ বা বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অথবা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
আকাশপথে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে বিলম্ব, ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ আইন প্রয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারি বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে এই আইনের বিধানগুলো প্রয়োগযোগ্য করতে পারবে।
মন্ট্রিল কনভেনশন এবং এর আলোকে প্রণীত প্রটোকল সংশোধনীগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এ আইন দ্বারা প্রয়োগ করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।