ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং ভোটগ্রহণ স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে ঢাকার দুই সিটির ভোটগ্রহণে কোনো বাধা রইলো না।
আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুরুস সাদিক, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াসিন খান এবং তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শানজানা ইয়াসিন খান।
গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, আইন সচিব, ঢাকার দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রিটের বিষয়ে শুনানি করতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. নুর-উস সাদিক বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল রিটের বিষয়ে শুনানি করবেন।
তখন আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে করা জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ রিট রোববার (২৬ জানুয়ারি) শুনানির জন্য কার্যতালিকায় টপে (শীর্ষে) থাকবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত না করায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করা পর্যন্ত নির্বাচনে ভোটগ্রহণ স্থগিত চেয়ে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।
ভোটার তালিকা আপ-টু-ডেট না করায় এ রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন রিটকারী আইনজীবী। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করাসহ বিভিন্ন গ্রাউন্ডে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান রয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ বিধান না থাকাটা বৈষম্যমূলক এবং এটি সংবিধানের ৭, ১৯, ২৬, ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য প্রথমে ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করে তফসিল দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই তফসিল সংশোধন করে ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। বিধি অনুসারে, নির্বাচন পেছানো নিয়ে তফসিল সংশোধনের সুযোগ নেই, পুনরায় তফসিল দিতে হয়।
২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার ২৭ বিধি অনুসারে, নির্বাচনের আগে সিটির ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয় রিটে। বলা হয়, বিধি ১১ (১) অনুযায়ী, প্রতি বছর ২ থেকে ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয় গত ২০ জানুয়ারি। ভোটার তালিকা হালনাগাদে এখনও ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নতুন ভোটাররা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
‘বিধি মোতাবেক, সিটি করপোরেশনের মেয়রের মেয়াদ হবে প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর। বর্তমান মেয়রদের প্রথম সভা ২০১৫ সালের ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে তাদের মেয়াদ চলতি বছরের ১৭ মে পর্যন্ত হওয়ার কথা। অথচ প্রায় ছয় মাস আগে নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে।’
রিটকারী আইনজীবীর বক্তব্য, ‘প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখের পরে যেমন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যায় না, তেমনি নির্বাচনের তারিখও পেছানো যায় না। বিধি মতে, নতুন করে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ১০ (১) বিধি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করেছে, আবার একই বিধি ১০ (১) অনুযায়ী তফসিল সংশোধিত করেছে, যা বৈধ নয়। নির্বাচনের তারিখ সংশোধনের কোনো বিধান আইনে নেই। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বরের তফসিল এবং গত ১৮ জানুয়ারির সংশোধিত তফসিল অবৈধ হবে।’
নির্বাচন কমিশনের নতুন তারিখ অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমের মাধ্যমে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।