উদ্ধার বা জব্দ করা মাদক পরিমাপের জন্য দেশের প্রতিটি থানায় ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মাদকের এক মামলায় উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ নিয়ে অসংগতির সূত্রে এক আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (২৬ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। জামিন আবেদনকারী আসামি সাগরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী উজ্জ্বল পাল।
আদেশের বিষয়টি জানিয়ে সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী গণমাধ্যমকে বলেন, কাফরুল থানার ওই মামলার এজাহারে ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। তবে একই মামলায় অভিযোগপত্রে মাত্র ১২ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের তথ্য এসেছে। জামিন আবেদন শুনানিতে বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্ট মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছিলেন। পুলিশের দুই কর্মকর্তা আদালতকে জানান, থানায় ওজন পরিমাপের কোনো যন্ত্র না থাকায় বাইরে থেকে পরিমাপ করে অনুমানের ভিত্তিতে ওই ওজন উল্লেখ করা হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আইজিপির প্রতি ওই নির্দেশ দেন। এক মাস পর বিষয়টি আবার কার্যতালিকায় আসবে।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ মো. সাগর নামের এক যুবককে গত বছরের ২ আগস্ট কাফরুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বাদী হয়ে সেদিন সাগরের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তবে কিসের ভিত্তিতে জব্দ করা হেরোইন পরিমাপ করা হয়েছে, তা এজাহারে উল্লেখ ছিল না। মামলার তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) ইমদাদুল হক গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রাসায়নিক পরীক্ষায় ১২ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মামলায় সাগর বিচারিক আদালতে জামিন চেয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিফল হন। পরে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন সাগর। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি হেরোইনের পরিমাপে অসংগতির বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। সেদিন হাইকোর্ট ব্যাখ্যা জানাতে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। ধার্য তারিখ ১২ জানুয়ারি মামলার বাদী সোহেল রানা ও তদন্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক আদালতে হাজির হয়ে মৌখিকভাবে ব্যাখ্যা দেন। তবে আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে লিখিতভাবে তাঁদের ব্যাখ্যা দিতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় তারা আদালতে আজ আদালতে হাজির হয়ে পুনরায় ব্যাখ্যা দেন ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়ে হাইকোর্ট তাঁদের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা মঞ্জুর করে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ ছাড়া সাগরকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন।