শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ছাড়াই চলা চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি ম
হাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ রায় দেন।
১৫ দিনের মধ্যে ওই চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার অর্থ পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে ওই অর্থ ব্যয় করতে বলা হয়েছে।
চার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- মিতা টেক্সটাইল, মেসার্স অভিজাত ডাইং, চাঁদপুর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও শারমিন টেক্সটাইল ডাইং।
আদালতে চারটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম ছিদ্দিকুর রহমান খান। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও আমাতুল করীম।
আইনজীবী সূত্র বলছে, বুড়িগঙ্গার পানি ও পরিবেশ দূষণ করার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ওই চার শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশ দেয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তর থেকে এই বিষয়ে নোটিশ দেওয়ার পর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে পৃথক রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজ দায়িত্বে তিন মাসের মধ্যে ইটিপি স্থাপনের অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধের ওই নোটিশ স্থগিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ইটিপি স্থাপন না করতে পারলে কর্তৃপক্ষ যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে আদেশে বলা হয়। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, গত বছর দেওয়া ওই রুলের ওপর হাইকোর্টের এই বেঞ্চে (রায় প্রদানকারী বেঞ্চ) শুনানি হয়। নিজেদের অঙ্গীকার করা তিন মাস সময়ে ওই চার প্রতিষ্ঠান ইটিপি স্থাপন করেনি। পরিবেশ আইনের ১২ ধারা অনুসারে ইটিপি ছাড়া কেউ শিল্প কারাখানা চালাতে পারবে না, চালালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এই আইনজীবী বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে ২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্ট তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আদেশ দেওয়া হয়। এসব তথ্য গোপন করে ওই চার প্রতিষ্ঠান রুলসহ স্থগিতাদেশ নেয়। সার্বিক বিবেচনায় হাইকোর্ট ওই চারটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন। রুল খারিজ হওয়ায় চার প্রতিষ্ঠান বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া নোটিশ বহাল রইল। যেকোনো সময় পরিবেশ অধিদপ্তর এগুলো বন্ধ করে দিতে পারবে।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১০ সালে একটি রিট করা হয়। এর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেওয়া হয়। তবে নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে ওই সংগঠনটি। ২০১১ সালে দেওয়া ওই রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানি হচ্ছে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।