তানজিম আল ইসলাম:
বাংলাদেশে র্ভাচুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য অধ্যাদেশ পাস হয়েছে। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন জানানো যায়। এর জন্য অবকাঠামোগত কিছু বিষয়ও তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনলাইনে জামিন আবেদনের জন্য একটি পোর্টালও তৈরি করা হয়েছে (mycourt.judiciary.org.bd) প্রাথমিকভাবে ব্যবহারে খুব সহজতর মনে হচ্ছে। সহজতর হয়েছে এটির ভালো দিক কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে।
সাইটে রেজিস্ট্রেশন করার সময় নিজে মোবাইল নম্বর থেকে শুরু কওে মা, বাবা, স্ত্রী, স্বামী,জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম তারিখ, ঠিকানা থেকে শুরু করে স্বাক্ষর পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। কিন্তু সাইটের কোথাও কোন তথ্য সুরক্ষার বিষেয়ে কোন ডিসক্লেইমার নেই। নেই কোন সুরক্ষার অধিকতর ব্যবস্থা।
সাইটটি দেখা গেছে কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বে এখন সাইবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্যক্তির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সাথে ব্যক্তি জীবনের নানাদিক জড়িত থাকে, থাকে তার ব্যক্তিগত জীবন, লেনদেনের সুরক্ষার বিষয়। এখন র্ভাচুয়াল কোর্টের মত অধিক পাবলিক ওরিয়েন্টেড সাইটে এত বেশি ব্যক্তিগত তথ্যের ইনপুট দেওয়া সাধারন চোখে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
একজন ব্যক্তির সব তথ্যই যদি দেওয়া লাগে সাইবার জগতে তা কোনভাবেই নিরাপদ নয়। বর্তমানে সাইবার অপরাধীরা অনেক বেশি সক্রিয় বিশ্বব্যাপি। কোন সরকারি বা বেসরকারি সাইটে এত তথ্য দেওয়া হলে কোন কারনে সাইট হ্যাক হলে কিংবা যেকোন উপায়ে এ তথ্য চুরি হলে তা একজন নাগরিকের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারন একটি তথ্যের সাথে তার অনেক কিছুই জড়িত তার ব্যাংক হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লেনদেন থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই। র্ভাচুয়াল কোর্টের সাইটটি দেখা গেছে এইচটিটিপিএস (https-Hypertext Transfer Protocol Secure) সমৃদ্ধ নয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরনের নিরাপত্তা না থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সাবার নিরাপত্তার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ সাইটে একজন আইনজীবীর শুধু বার এবং সদস্য নম্বর দেওয়া থাকলে এবং এ সদস্য নম্বরের সাথে সংশ্লিষ্ট বারের অর্ন্তভুক্ত সদস্য নম্বর অটো যাচাইয়ের একটি ব্যবস্থা থাকাই অধিক যুক্তিসংগত বলে মনে হয়। এছাড়া এনআইডিএর বদলে বারের সদস্যের পরিচয়পত্র ইনপুট দেওয়া যেতে পারে।
সাইটটিতে ব্যক্তিগত এত তথ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করা উচিত হয়নি। তাই আশা করব এখনো যেহেতু পরীক্ষামূলক সংস্করনে আছে তাই সাইটটিতে আরও সংস্কার করে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান কমিয়ে তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি জোরদার করতে হবে। না হলে র্ভাচুয়াল কোর্টের যে সুফল আমরা চাচ্ছি তা ভেস্তে যেতে পারে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।