নিভে গেছে জাতির এক বাতিঘর। অদেখা ভুবনে চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
বাংলাদেশের কীর্তিমান এ মানুষটির মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশে। তার মৃত্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কমকে জানান, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জাতীয় অধ্যাপক এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. আনিসুজ্জামান এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক খন্দকার কামরুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরে প্রত্যাশিত উন্নতির লক্ষণ দেখতে না পাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে গত ২ মে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ৯ মে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়েছিল।
কিছু মানুষ নিজের কর্ম ও পরিচয়ের গুণে ধীরে ধীরে একটি জাতির জন্য মহিরুহসম আকার ধারণ করেন। জাতির বাতিঘর, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তেমনই একজন। কয়েক প্রজন্মের প্রিয় শিক্ষক এই বাতিঘর তাই সর্বজনমান্য ‘স্যার’ হিসেবেই পরিচিত ও গণ্য ছিলেন। তিনি একাধারে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক, স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ। দেশ ও মানুষের যে কোনো বিপর্যয়ে তিনি অতন্দ্র বাতিঘরের মতো যুক্তিনিষ্ঠ, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে নিরাবেগ মতামত ও দিকনির্দেশ প্রদান করেছিলেন।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৮৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। জীবনজুড়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আরও পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার। এ ছাড়াও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ও লাভ করেন।