আবদুল্লাহ আল মামুন:
আমাদের দেশের আইন অংগনে গত কয়েক দিনের সবচেয়ে আলোচিত এবং কতিপয় ক্ষেত্রে সমালোচিত বিষয় হলো আদালতসমূহের ভার্চুয়াল কার্যক্রম।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে অধ্যাদেশ জারী করার পরে দ্রুতগতিতে বিচার কর্ম বিভাগের অভিভাবক মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নির্দেশনায় এই বিষয়ে নির্দেশনা জারী করেছে সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন। UNDP এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশের সকল দায়রা জজ আদালত,ট্রাইব্যুনাল, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। ইতোমধ্যে সুপ্রীম কোর্টের কয়েকটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে এবং উচ্চ আদালতও সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনায় অগ্রসর হচ্ছেন।
অবাক করার মতো বিষয় হলো বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলার স্বনামধন্য আইনজীবী সমিতি এই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রেজুলেশন নিয়েছে। কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে ল্যাপটপ, স্মার্ট মোবাইল না থাকা এবং ব্যবহার না জানা, স্ক্যানার না থাকা। অনলাইন এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করার জন্য বিজ্ঞ আইনজীবীগনকে ট্রেনিং না দেয়া ইত্যাদি। এই কারণগুলো কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেগুলো সংশ্লিষ্ট বার ভালো বলতে পারবেন।
প্রশ্ন হলো আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমে অংশগ্রহনের জন্য কতটুকু জ্ঞান থাকা দরকার। উত্তর হলো-একটি স্মার্ট ফোন, সাথে ইন্টারনেট সংযোগ, ইমেইল প্রেরন করা,একটা কাগজ পিডিএফ করা, ইমেইলে সেটি সংযুক্ত করা(attachment) কিংবা স্রেফ দরখাস্তের ছবি তুলে attach করা, ভিডিও কলে কথা বলা এতটুকুই। এই দক্ষতার জন্য তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রির দরকার নেই। দরকার স্রেফ শিখতে চাওয়ার এবং সেটি প্রয়োগের। আমরা কি শিখতে চাই বা প্রয়োগ করতে চাই? ব্যক্তি বিশেষে এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই ভিন্ন হবে। সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আশংকার বিষয় হলো আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রম কি সেটাই অনেকে বুঝতে চাচ্ছেন না। শিখতে চাওয়া অনেক দূরের বিষয়। তারা হুমকি ও দিয়েছেন যে, সেই জেলাগুলোতে যদি আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমে কেউ অংশগ্রহন করে তাহলে বিজ্ঞ আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল করা হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে। যারা অনলাইন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন বা পারবেন না তাদের নিজ নিজ অধিকার রয়েছে আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহন না করার। অর্থাৎ, কোন ক্লায়েন্ট বা মক্কেল আসলে তাকে বলে দেয়া বাপুরে এইসব অনলাইন টনলাইন আমি পারি না। আমি মোবাইলে এস এম এস ও পাঠাতে পারি না। শুধু মোবাইলে কল আসলে বাটন চেপে কল ধরি, আর কথা শেষ হলে বাটন চেপে কেটে দেই। আমি ফেসবুকও চালাই না। এইসব জানিনা। তুমি বাপু স্মার্ট ফোনওয়ালাদের কাছে যাও।ওরা টিপাটিপি করে দিয়ে কাজ সেরে দেবে। সুতরাং,মক্কেল স্মার্ট ফোন ওয়ালাদের কাছে চলে যাবে। আর যে মক্কেল একবার যায়, যারা প্র্যাকটিস করেন তারা জানেন, সে মক্কেল আর কখনো ঘরে ফেরে না।
এই বিরোধিতা শুধু মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারীকৃত অধ্যাদেশের বিরোধিতা নয়, একই সাথে অন্যদের প্রতিহত করাও। এই বাধা নিষেধ অমান্য করে বেশ কিছু তরুণ আইনজীবী আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। তাদের কপালে বয়কটওয়ালারা কি রেখেছেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। সুতরাং, আইনজীবীদের তরুণ অংশ বা স্মার্টফোন ওয়ালারা এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, যাদের স্মার্টফোন নেই,স্মার্টফোন চালাতে পারেন না তারা বয়কট করেছেন। মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে এবং দুটোই খবরের শিরোনাম হয়েছে।
এর আগে সপ্তাহে ২ দিন আদালত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। করোনা ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময়ে প্রায় সকলে সেটার বিরোধিতা করেছিলেন এবং আদেশ জারীর ১/২ দিন পরেই সেই চেষ্টা স্থগিত করা হয়েছিলো। সেই প্রচেষ্টা ছিলো ফিজিক্যাল উপস্থিতির বিরুদ্ধে। এইবার সেটা হলো ভার্চুয়াল আদালতের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ ভার্চুয়াল আদালতের পরিবর্তে আবার দুই দিনের শারীরিক উপস্থিতির আদালতের দাবী তুলেছেন।
আসলে আমরা কি চাই? আদালত কি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকতে পারে নাকি বন্ধ থাকা উচিত?
যারা এই লেখা এখনো পড়ছেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ ছিলো না। কারণ, পুলিশ আসামী ধরলে তার গন্তব্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সুতরাং, এই সময়েও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। প্রতিদিন তার দায়িত্বপালন করেছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। করোনা ঝুঁকিতে কি ম্যাজিস্ট্রেট নেই? অবশ্যই আছেন। বেশ কয়েকটি দেশের বিচারক, সহায়ক স্টাফ ও মারা গিয়েছেন। সেটি ইংল্যান্ডসহ কয়েকটি উন্নত দেশে৷ সেখানেও ভার্চুয়াল আদালত এবং শারিরীক উপস্থিতির আদালত দুটোই সমানতালে চলছে। বিচারক নির্ধারণ করছেন ভার্চুয়াল নাকি ফিজিক্যাল উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি বিচার কার্য পরিচালনা করবেন। সেখানেও আইনজীবী বা এটর্ণী অংশগ্রহণ করছেন।
তাহলে আমরা প্রশ্ন করতে পারি আদালত বন্ধ থাকলে কি সুবিধা? আদালত খোলা থাকলে কি অসুবিধা?
আমাদেরকে আইন শিক্ষা প্রদানের সময়ই আমাদের সম্মানিত শিক্ষকগণ (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গন, আমাদের অগ্রজ বিচারকগন) শিখিয়েছিলেন আদালত বিচারকের জন্য নয়, আদালত আইনজীবীর জন্য নয়, আদালত আদালতে কাজ করা সহায়ক কর্মচারীগন, মুহুরি/ক্লার্ক এদের জন্যও নয়। তাহলে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কার জন্য? উত্তরটা হলো – যে বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছের প্রতিফলনে এই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছেন জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান -আদালত হলো সেই বাংলাদেশের জনগনের জন্য। জনগন তথা বিচারপ্রার্থীর জন্য বিচারক, আইনজীবী, সহায়ক স্টাফ, মুহুরি/ক্লার্ক। কিন্তু, কখনোই বিচারক, আইনজীবী, সহায়ক স্টাফ বা ক্লার্ক/মুহুরির জন্য আদালত তৈরি হয়নি। আমরা কখনোই আমাদের শিক্ষা অনুযায়ী বলতে পারি না এই আদালত আমার। বরং,বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যা কিছু তা জনগনের। অপরাধী যদি অপরাধ না থামায়, একজন বিচারপ্রার্থী যদি বিচার না পায়,তাহলে আদালত কেন বন্ধ থাকবে? অবশ্যই রাষ্ট্রের জনগনের নিরাপত্তার জন্য আদালত বন্ধ থাকতে পারে এবং করোনা পরিস্থিতির জন্য বন্ধও ছিলো। আমরা এখনো জানি না আদালত সম্পূর্ণভাবে কখন খুলে দেওয়া হবে? নিঃসন্দেহে জনগনের জন্য যখন নিরাপদ হবে তখন আদালত সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হবে এবং এই বিষয়ে সদাশয় সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের সকল কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪১/৪২ হাজার। কিন্তু সে জায়গায় এখন সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন মামলায় কারাগারে রয়েছেন ১ লক্ষ/১ লক্ষ বিশ হাজারের মতো মানুষ।হয়তো স্বাভাবিক সময়ে জামিন পেতে পারতেন এই রকম মানুষ ও আদালত বন্ধ থাকার কারণে লকডাউনের সময়ে জেলে ছিলেন। এই মানুষগুলোর কি হবে? অনেকে উত্তর দিচ্ছেন এরা কারাগারেই নিরাপদ আছে। বাহির/মুক্ত হলেই বরং বিপদ। জামিন পেলে বাড়ি যাবে কি করে? ওখানে আরামেই আছে। চমৎকার উত্তর নিঃসন্দেহে। কিন্তু যে পরিবারের কেউ কারাগারে আছেন সে পরিবারের বা সেই লোকটির জন্য নির্মম উত্তর এটা।
কারণ, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের কেউ নিরাপদ নন। তিনি ঘরে থাকুক বা কাজের জন্য বাইরে আসুক-কেউই নিরাপদ নয়। আমি বা আমরা যতই সুরক্ষার আবরণে আচ্ছাদিত হই না কেন আমার পাশের মানুষটি যদি নিরাপদ বা সচেতন না হয়, তবে আমিও নিরাপদ নই। বেঁচে থাকাটাও এখন অন্যের উপর নির্ভর করছে। যারা আদালত খুলে দেওয়ার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন তারা নিঃসন্দেহে সবার ভালো,মংগলের জন্য বিরোধীতা করছেন। সেখানে তরুন আইনজীবীদের সাথে প্রফেশনাল জেলাসির মতো কোন বিষয় নেই বলেই বিশ্বাস করি।
ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য আমরা কি প্রস্তুত? উত্তরটি মিশ্র।সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সরকারের মুক্তপাঠ এপস সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রচুর ভিডিও কি করে ভার্চুয়াল আদালতের শুনানীতে অংশগ্রহণ করতে হয়? যে কেউ চাইলে সেটা দেখে শিখে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা কি এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারি? উত্তর-অবশ্যই না। ডিজিটাল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ডিজিটালি আদালত ব্যবস্থাপনার মধ্যেই নিহিত। এই কার্যক্রম সূচনার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। সেটা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশ যেখানে ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে,সেখানে আমাদের দেশ অবশ্যই পিছিয়ে থাকবে না। বর্তমানে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার সামান্য একটি অংশ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি দেওয়ানি বিষয়ের জন্যও হবে। ফৌজিদারী বিচার ব্যবস্থায় জামিন শুনানী আদালতের কাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ৷ এটি মামলার কোন পর্যায়ও নয়। শতাংশের হিসেবে এটা ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থার ৩/৫ শতাংশ হতে পারে। এর বেশি নয়। অদূর ভবিষ্যতে আমরা আশা করতে পারি ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা পরিপূর্ণ পরিসরে চালু হবে।
জে এম বি এর মতো ঝুকিপূর্ণ অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা হবে না। শিশু অভিযুক্তদের সূদুর গাজীপুর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়াতে হবে না। বরং, তারা কারাগার বা সংশোধন কেন্দ্রে বসে মামলার শুনানী দেখবেন। ডাক্তার,পুলিশ সাক্ষী সুদুর নেত্রকোণায় বা ঢাকায় অফিসে বসে বান্দরবানের মতো দূরবর্তী জেলায় সাক্ষ্য প্রদান করবেন।আসতে যেতে ২/৩ দিন কষ্ট করতে হবে না। বিচারপ্রার্থী ঘরে বসেই তার মামলার খবর জানবেন।
এই বিষয়গুলো সম্ভব আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমের মাধ্যমে। সুতরাং,করোনা শুধু একটি অভিশাপের নাম নয়। এটি অনন্য সম্ভাবনারও। ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার দিকে এটি সামান্য একটি পদক্ষেপমাত্র। কে না জানে একটি ছোট পদক্ষেপই মানুষকে অনন্ত সম্ভাবনার দিকে ধাবিত করে।
আজ প্রথমবারের মতো আমরা বান্দরবান জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালত এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করেছি। এর পুরোভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা জজ স্যার এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যার। এটা বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, প্রসিকিউশন সবার জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা। কিন্তু, আমরা চেয়েছি এই অভিজ্ঞতা সবার জন্য সহজ হোক। সবাই অভ্যস্ত হোক। সুতরাং, গত কয়েকদিন আমরা সবাই ভিডিও কলে কথা বলেছি।গ্রুপ তৈরি করেছি। সেখানে চ্যাটও হয়েছে। বিজ্ঞ আইনজীবীগন সমস্যা বলেছেন। সবাই সবার সমস্যা জানার এবং সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি। প্রথম সমস্যা ছিলো বিজ্ঞ আইনজীবীগন ডকুমেন্ট পাবেন কোথায়? না পেলে আবেদন করবেন কি করে? সুতরাং, আমাদের জি আর সেকশন এবং একজন বেঞ্চ সহকারীকে আমরা বলে দিয়েছি বিজ্ঞ আইনজীবীগন কোন নথির কোন ডকুমেন্ট চাইলে সেই ডকুমেন্ট যদি স্বাভাবিক সময়ে আইনজীবী পেতে বা দেখতে পারেন, তবে সেটা যেন ভাইবার, হোয়াটস এপ, ইতো বা মেসেঞ্জারে ছবি তুলে বা স্ক্যান করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা তাদের মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিয়েছে। আমরা সংখ্যায় কম। কাজ কম। এটা আমাদের জন্য সহজ। আমরা আইনজীবীদের বলেছি যে কাগজ নথিতে আছে সেটা না ইমেইলে পাঠিয়ে ইমেইলের এমবি না বাড়াতে। বরং, এমন কোন কিছু যা নথিতে নেই,সেটি দিতে। সুতরাং, ইমেইল হাল্কা হয়েছে। কিন্তু সেই হাল্কা ইমেইলও বান্দরবানের বিখ্যাত মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে ভারী হয়ে গিয়েছে। সেটাও আমরা এড়িয়েছি। কথা বলার সময় বার বার কল কেটে গিয়েছে। সবাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছি। এইরকম আরো অনেক সমস্যা ছিলো যা আমরা সবাই মিলে সমাধানের চেষ্টা করেছি। ভার্চুয়াল বলা হলেও প্রযুক্তিগত কারণে সব সময় সেটা ভার্চুয়াল রাখা সম্ভব হয়নি। একচুয়াল হয়ে গিয়েছে। আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছি। একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ভার্চুয়ালের বদলে প্রায় একচুয়াল হয়ে শুনানীও করেছেন!
আজ বান্দরবান আদালতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে ২২ টি মামলার শুনানী হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৪ টি মামলার শুনানী হয়েছে। আমরা ইমেইল প্রাপ্তির সময় অনুযায়ী নাম্বারিং করেছি এবং শুনানীর সময় জানিয়েছি। বিজ্ঞ আইনজীবীগন প্রায় সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আদালতকে সহযোগিতা করেছেন। তরুণদের সাথে সাথে সিনিয়র আইনজীবীগন সাবলীলভাবে ভার্চুয়াল কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এটা আমাদেরকে আশাবাদী করেছে। আমরা বিজ্ঞ আইনজীবীগন, আদালতে কর্মরত স্টাফগন, পুলিশ সদস্যগন, কারা প্রশাসন,আইনজীবীগনের ক্লার্ক সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বান্দরবানের আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমের প্রথমদিনের কাজকে সফল করার জন্য। আমরা প্রত্যাশা করি পরষ্পরের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই বিচার ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে। সমস্যা নয়,বরং সেটি সমাধান চেষ্টাই আমাদের ভবিষ্যতের পথ তৈরি করবে এবং সেই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। বিরোধীতা নয়,বরং সহযোগিতাই গণমুখী বিচার ব্যবস্থা তৈরি করবে। আমরা যত দ্রুত বুঝতে পারবো ততই আমাদের মংগল। আমরা ভুল যদি না করি,তবে শিখবো কি করে? একটি ব্যবস্থা দাঁড় করানোর প্রাথমিক পর্যায়ে ত্রুটি থাকবেই। সেই ত্রুটিগুলো সারানোর চেষ্টাই সবাই মিলে করতে হবে।
আজ সারাদেশে আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৪৩৪টি মামলা শুনানী ও নিষ্পত্তি হয়েছে। জামিন পেয়েছে ১৮২১ জন কারাগারে থাকা বন্দী। আমি সারাদেশের বিচারকগন এবং আইনজীবীগনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এই কার্যক্রমের জন্য। অনেক জেলায় মামলা বা আবেদনের চাপে একাধিক কোর্ট গঠন করতে হয়েছে। নিঃসন্দেহে বিচার বিভাগের উপর এই আস্থায় আমরা আশাবাদী হয়েছি এবং আমরা বিশ্বাস করি বিচার কর্ম বিভাগ ন্যায়বিচারের দন্ড সমুন্নত রেখে এই ভার বহন করতে প্রস্তুত। আমরা সকল পর্যায়ে পূর্নাঙ্গ ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থা প্রত্যাশা করতেই পারি। কিন্তু, একই সংগে এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য আইনজীবীগনের অংশটুকুও (ওকালতনামা, কোর্ট ফি, প্রভৃতি) ডিজিটাল করার দাবী জানাচ্ছি। বিকাশ বা নগদ এপস এক্ষেত্রে খুব সহজ সমাধান হতে পারে।
আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমে ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ, নতুন ভোর কখনোই অন্ধকার দিয়ে শুরু হয়না। সেটি অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসে মাত্র।
লেখক- অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বান্দরবান।