আল আমীন সিদ্দিকী:
করোনা মহামারীর এই সময়ে অন্য সবকিছুর মতো বাংলাদেশের আদালত অঙ্গনেও বিরাজ করছে স্থবিরতা। বিচারপ্রার্থী মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। পবিত্র সংবিধান মোতাবেক ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা যায় না। সার্বিক বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ আপদকালীন হিসেবে শুধুমাত্র জামিনসংক্রান্ত বিষয়ে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট প্রবর্তন করেছেন।
ভার্চ্যুয়াল কোর্টের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকা সত্বেও তা অব্যাহত রয়েছে। যেকোন বিষয়েই শুরুর দিকে কিছুটা সমস্যা থাকে। পরবর্তীতে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়। এভাবেই এগিয়ে চলে যেকোন পদ্ধতি বা বিষয়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে কিছুটা হলেও সুবিধা পাচ্ছে বিচারপ্রার্থী মানুষ। তাই, ভার্চ্যুয়াল কোর্টকে স্বাগত না জানানোর সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে আদালতের কার্যক্রমে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতি আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহৃত হোক- সেই প্রত্যাশাই করি। ভবিষ্যতেও “ভার্চ্যুয়াল কোর্ট” অব্যাহত রাখলে আদালতের সার্বিক কার্যক্রমে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতি কী কী সুবিধা বয়ে আনবে আর চলমান পদ্ধতির কী কী অসুবিধা দূর হবে সেই বিষয়ে পৃথক আলোচনা করা যাবে।
এখানে আলোচনার বিষয়- কোর্টের শব্দ ধারণ, আদালতের কার্যক্রমের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ এবং তা জনসাধারণের নিকট উন্মুক্ত করা প্রসঙ্গে।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ভার্চ্যুয়াল কোর্টের কার্যক্রমের স্থির চিত্র ধারণ করে অনেকেই তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। আমরা জানি, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিভাবেই আদালতের কার্যক্রম চলাকালে আদালতের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় না। একই সাথে আদালতের বক্তব্য রেকর্ড এবং কোনপ্রকার কার্যক্রমের স্থিরচিত্র বা ভিডিও চিত্রও ধারণ করা যায় না। সরাসরি ধারণ করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার তো প্রশ্নই আসতে পারে না।
এ বিষয়ে Supreme Court of Bangladesh (High Court Division) Rules, 1973 এর Chapter- XVIA, Miscellaneous এর ধারা ৩ এর Maintenance of Security এর উপধারা ৫ এ বলা হয়েছে, “No person shall take photograph of the proceedings of a Court Room nor shall make any audio recording. Every person before entering a Court room must switch off his mobile phone”. এই বিধিতে বলা নেই যে এটা কোন সময়ের কোন আদালতের বেলায় প্রযোজ্য। এটা সকল সময়ের সকল প্রকার আদালতের বেলায়ই প্রযোজ্য। কাজেই, ভার্চ্যুয়াল আদালতের বেলায়ও আমাদেরকে এই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
আমরা আদালত অঙ্গনের মানুষ আইন চর্চা করি। আইনের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। আমরা যদি আইন ভঙ্গ করি, তবে সাধারণ মানুষ কী করবে- এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। আশা করি, আইনজীবী ও বিচারকবৃন্দসহ সবাই বিষয়টি আমলে নেবেন এবং বিষয়টি মাথায় রেখে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের কার্যক্রম চালাবেন।
আল আমীন সিদ্দিকী: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।