ড. মো. রাশেদ হোসাইন:
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় হিসেবে এবং করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার নিশ্চিতকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপতি গত ৯ মে, ২০২০ খ্রি. তারিখ “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০” জারি করলে উক্ত অধ্যাদেশের ৫ ধারার ক্ষমতাবলে গত ১০ মে, ২০২০ খ্রি. তারিখ উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে জরুরি জামিন শুনানির জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত “বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা” মোতাবেক গত ১১.০৫.২০২০ খ্রি. তারিখ হতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ভিডিও কনফারেন্সিং -এর মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
এই কার্যক্রমের গর্বিত অংশীদার হতে পেরে আমিও ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছি। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি হওয়ায় প্রথম দিনে প্রত্যেক জেলা আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু না হলেও পরের দিন থেকে কিছু জেলা ব্যতীত প্রায় সব জেলায় এর কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কয়েকটি জেলার আইনজীবী সমিতি ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম হতে নিজেদের বিরত রাখলেও পরবর্তীতে তারা বিচারপ্রার্থীর দূর্দশার কথা চিন্তা করে কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি সেসব আইনজীবী সমিতিদের ভার্চুয়াল কোর্টে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী গত ১১.০৫.২০২০ খ্রি. তারিখ হতে ২০.০৫.২০২০ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত ৮ কর্মদিবসে সারাদেশে মোট ২৮,৩৪৯ টি জামিন আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে মোট ১৮,৫৪৫ জন আসামি জামিনে মুক্ত হন। এটি নিঃসন্দেহে ই-জুডিশিয়ারি চালুর প্রারম্ভিক সফলতা হিসেবে পরিগণিত হয় যার অংশীদার বাংলাদেশ সরকারসহ বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ এবং আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। ভার্চুয়াল কোর্টের এমন সফলতায় বিভিন্ন মহল থেকে পর্যায়ক্রমে বিচার প্রক্রিয়ার সর্বস্তরে ভার্চুয়াল বিচার পদ্ধতি চালু করার দাবী উত্থাপন করা হচ্ছে। সব আদালতে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা চালু করা গেলে অবশ্যই বিচারপ্রার্থীগণ অভাবনীয়ভাবে উপকৃত হবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আমার এই লেখায় ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে বাস্তবিক যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বা হচ্ছে এবং তার আশু করণীয় কী হতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছি। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি ভার্চুয়াল কোর্টে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জরুরি জামিন বিষয়ে শুনানি করা যায়। জামিন আবেদন শুনানির জন্য আপাতত একজন বিজ্ঞ আইনজীবীকে দুটি পদ্ধতির মধ্যে যেকোনো একটির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে জামিন আবেদন করতে হলে আপনার একটি ই-মেইল এড্রেস, একটি স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ অথবা ওয়েবক্যাম সংযুক্ত ডেক্সটপ কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হবে।
mycourt.judiciary.org.bd এই ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে লগ ইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে কাগজপত্র সংযুক্তির (এটাচমেন্ট) মাধ্যমে অথবা সংশ্লিষ্ট আদালতের ই-মেইল এড্রেসে জামিনের দরখাস্ত ও ওকালতনামা সংযুক্ত করে জামিন আবেদন করা যাবে। উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জামিন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হলে আপনাকে মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে Microsoft teams অ্যাপসটি ইন্সটল করে নিতে হবে। যথাযথভাবে আবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট আদালত হতে ফিরতি মেইলে শুনানির তারিখ ও সময় উল্লেখে আপনাকে একটি ভিডিও লিংক দেওয়া হবে। প্রদত্ত ভিডিও লিংকে উক্ত তারিখ ও সময়ে প্রবেশ করে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুনানি করতে হবে। অপরদিকে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে শুনানি করতে হলে মোবাইল অথবা কম্পিউটারে zoom cloud meetings বা google meet অ্যাপসটি ইন্সটল থাকতে হবে।
ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলাপূর্ণ হওয়ায় বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিকট এই পদ্ধতি অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে ধীরে ধীরে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শুনানিতে অভ্যস্ত হওয়া ব্যঞ্চনীয় মনে করি। কেননা ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে UNDP -এর কারিগরি সহায়তায় সফটওয়্যারটি ডেভেলপ করেছে। উক্ত দুই মাধ্যমে আবেদন করা গেলেও ময়মনসিংহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে মোট ৬ টি ভার্চুয়াল কোর্টে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন বেশি দাখিল হচ্ছে যা প্রাথমিক অবস্থায় অবশ্যই প্রশংসনীয়। কোন রকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই সার্বিক সহযোগীতার জন্য ময়মনসিংহ বার সমিতি সহ বিজ্ঞ আইনজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে ধন্যবাদ জানাই। ময়মনসিংহে মোট ৬ দিন ভার্চুয়াল কোর্ট রয়েছে। আমি ৪ নং ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তার আশু করণীয়সহ আলোচনা করছি যা বিজ্ঞ আইনজীবীদের উপকারে আসতে পারে।
আমি মূলতঃ দুইভাবে তথা, প্রথমতঃ বিজ্ঞ আইনজীবীগণ কর্তৃক ই-মেইলে প্রেরিত দরখাস্ত সম্পর্কিত সমস্যা ও আশু করণীয় এবং দ্বিতীয়তঃ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি করাকালে পরিলক্ষিত সমস্যা ও এর আশু করণীয় কী তা সাজিয়েছি; যা নিম্নে প্রদত্ত হলো। তবে এই আলোচনাকে কোনভাবেই পরিপূর্ণ বলা যায় না।
ই-মেইল সম্পর্কিত সমস্যাবলি ও আশু করণীয়:
১. আপনি ই-মেইলে জামিন আবেদন করলে ফিরতি মেইলে আপনাকে ভিডিও লিংক দেওয়া হয়। শুনানি চলাকালে আমাকে পুনরায় নতুন এড্রেসে সেই লিংক প্রেরণ করতে হয়েছে কারণ বিজ্ঞ আইনজীবী ফোন করে বলেছেন লিংকটি হারিয়ে গেছে। এজন্য বিজ্ঞ আইনজীবীদের প্রত্যেকের নিজস্ব ই-মেইল এড্রেস খুলে নেওয়া উচিৎ। আমি ট্রাভেল এজেন্সির মেইল এড্রেস থেকেও জামিনের আবেদন পেয়েছি। এক্ষেত্রে দেখা যায় বিজ্ঞ আইনজীবী শুনানির সময় সেখানে অবস্থান না করায় পুনরায় নতুন এড্রেসে লিংকটি পাঠাতে হয় যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ঝামেলাপূর্ণ। যেহেতু ফিরতি মেইলে আপনাকে ভিডিও লিংকটি দেওয়া হবে সেহেতু আপনার নিজস্ব মেইল এড্রেস থাকলে প্রদত্ত লিংকে সহজেই প্রবেশ করে শুনানি করতে সুবিধা হবে।
২. আমি একই মেইল এড্রেস থেকে একই আবেদন ৩-৪ বার পেয়েছি। হয়তো বিজ্ঞ আইনজীবী ভেবেছিলেন তার আবেদনটি যথাযথভাবে পৌছেছে কিনা। একই আবেদন একাধিক থাকলে তা বাঁছাই করতে সমস্যা হয়। আপনি আদালতের মেইল এড্রেস ঠিকভাবে লিখে সেন্ডে ক্লিক করে সেন্ট লেখা দেখা গেলে পুনরায় পাঠানোর আর দরকার নেই। তবে আপনার দরখাস্ত, ওকালতনামা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যদি থাকে) সেগুলো সেন্ড করার আগেই অবশ্যই এটাচড করে নিবেন। আমি ডকুমেন্টস এটাচড করা ছাড়াও মেইল পেয়েছি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এটি অস্বাভাবিক নয়।
৩. আমি এটাচড ডকুমেন্টসগুলো এমনো পেয়েছি যা অস্পষ্ট; প্রিন্টের পর পড়া যায় না। শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে প্রেরণ করার কারণে এমনটা হতে পারে। এসব ছবি তুলতে গিয়ে হাতসহ আসেপাশে রাখা বস্তুও দেখা যায় যা দৃষ্টিকটুও বটে। আপনি মোবাইলে ইন্সটল করা স্ক্যানার দিয়ে ডকুমেন্টস ছবি তুলে ক্রপ করে জেপিজে অথবা পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ করে পাঠালে তা সহজেই বোধ্য হয়। তবে অনেকেই সেই পদ্ধতিতে আবেদন করছেন যা প্রসংশনীয়।
৪. যে থানার জামিন শুনানি করার এখতিয়ার আমার নেই সেই থানার জামিন আবেদনও পেয়েছি। আপনি সংশ্লিষ্ট আদালতের সঠিক ই-মেইল এড্রেস জেনে নিতে পারেন। বিজ্ঞ সিজেএম/সিএমএম বা অন্যান্য আদালত ইতোমধ্যে ই-মেইল এড্রেস সহ আদেশ করেছেন যার কপি নিজের কাছে সংগ্রহে রাখুন।
৫. জামিনের দরখাস্ত, ওকালতনামা এবং জামিননামা কোর্ট ফি ব্যতীত পেয়েছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ হতে কোর্ট ফি মওকুফ না থাকায় আপনাকে অবশ্যই প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সঠিক কোর্ট ফি দিতে হবে। একই কোর্ট বিভিন্ন দরখাস্তে ব্যবহার করা আইন বিরোধী। সেক্ষেত্রে কোর্ট ফি’র উপর তারিখ সহ স্বাক্ষর করে সংযুক্ত করা উচিৎ হবে। আশা করি অচিরেই কোর্ট ফি প্রদান পদ্ধতি ডিজিটালাইজড হবে।
৬. অনেক সময় মেইলের সাব্জেক্টে কিছুই লেখা থাকছে না। সেটি না থাকায় বোঝার জন্য বারবার উক্ত এড্রেসে ঢুকতে হতে পারে যা সময় নষ্ট করে। যদি সুনির্দিষ্টভাবে মেইলের সাবজেক্টে মামলা নাম্বার, আসামির নামসহ জামিনের দরখাস্ত, জামিননামা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে তাহলে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
৭. একই মামলার একাধিক আইনজীবীর ওকালতনামাসহ দরখাস্ত পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোন দরখাস্তই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না। সেজন্য ইতিপূর্বে ক্লায়েন্ট অন্য কোন আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেছেন কিনা তা আগেই জেনে নিতে হবে।
৮. জামিনের আবেদনে মামলার পরবর্তী অথবা পূর্ববর্তী ধার্য তারিখ উল্লেখ থাকছে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নথি খুঁজে বের করা দূরুহ হয়ে যায়। তাই আপনার জামিনের দরখাস্তের পাশে স্পষ্টভাবে মামলার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী ধার্য তারিখ উল্লেখ করবেন যা নথি খুঁজে বের করতে সুবিধা হবে।
৯. যদি কোন আবেদনে সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ফিরতি মেইলে তা সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়। বিজ্ঞ আইনজীবী ফিরতি মেইল চেক না করায় সংশোধিত আবেদন আর পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নথি না থাকায় শুনানি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনারা অবশ্যই ফিরতি মেইল চেক করবেন। প্রশ্ন হলো ফিরতি মেইল কয়টায় পাঠানো হবে? সাথে সাথে পাঠানো না গেলেও রাত ৯-১০ টার মধ্যে চেক করা যেতে পারে। দরখাস্তের পরিমানের উপর শুনানির তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয়। আগের রাত ৮.০০ টার মধ্যে অবশ্যই দরখাস্ত দাখিল করবেন। এক্ষেত্রে জেলায় জেলায় ভিন্নতা থাকতে পারে।
১০. আসামির জামিন আবেদন মন্জুর হলে জামিননামা একাধিক এটাচড করার দরকার নেই। একটি এটাচডই যথেষ্ট হবে। কেননা একটি হতে একাধিক প্রিন্ট করা সম্ভব।
১১. যেহেতু আপনি আদালতে জামিনের দরখাস্ত, ওকালতনামা, জামিননামার বা অন্যান্য দাখিলি কাগজপত্রের সফটকপি দাখিল করছেন, সেহেতু পরবর্তী জটিলতা এড়ানোর জন্য সফট কপিগুলোর হার্ড কপিও আলাদা আলাদা ফাইলে যদি সম্ভব হয় যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন। জামিন আবেদন করতে গিয়ে
১২. যেসব মামলার মূল নথি উচ্চ আদালতে আছে সেসব মামলার জামিন আবেদন শুনানির আগে মূল নথি ভার্চুয়াল কোর্টে প্রেরণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
১৩. ভার্চুয়াল কোর্টের আদেশের নকল পেতে আগের নিয়মে আবেদন করলে জটিলতা এড়ানোর জন্য কম সময়ের মধ্যে আদেশের প্রত্যায়িত ফটোকপি সরবরাহ করা হচ্ছে।
১৪. তাছাড়া জামিন আবেদন করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেনো/পেশকারের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে ফোন করে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ভিডিও কনফারেন্সে শুনানির সময় পরিলক্ষিত সমস্যা ও আশু করণীয়:
১. আদালত কর্তৃক প্রেরিত ভিডিও লিংকে শুনানির তারিখ ও সময়ে বিজ্ঞ আইনজীবী ঢোকার পর কথা শোনা যায় না। এক্ষেত্রে কয়েকবার অডিও মিউট-আনমিউট অপশানে কয়েকবার ক্লিক করলে কথা শোনা যাবে। আবার অডিও, ভিডিও অপশন অফ থাকায় কথা শোনা যায় না বা একে অপরকে দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে অডিও, ভিডিও অন করে নিতে হবে। অথবা বিজ্ঞ আদালত আপনাকে ভিডিও অন করার জন্য রিকুয়েষ্ট পাঠালে সেটি অন করতে হবে।
২. Zoom cloud meetings অ্যাপস -এর মাধ্যমে শুনানি একবার শুরু হলে পরবর্তী ৪০ মিনিট একটানা করা যাবে। ৪০ মিনিট অতিবাহিত হলে অটোমেটিক ডিসকানেক্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পুনরায় লিংকে ঢুকে মিটিং শুরু করার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
৩. একদিনে অনেকগুলো জামিনের আবেদন শুনানি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একই সাথে একাধিক আইনজীবী লিংকে ঢোকার চেষ্টা করলে এক বা একাধিক আইনজীবীকে ওয়েটিং -এ থাকতে হতে পারে। তাই এ সময় ধৈর্য্য ধারণ অত্যন্ত জরুরি।
৪. ভিডিও কনফারেন্সের সময় নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট থাকা আবশ্যক। যদি আপনি নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট না পাওয়ার আশংকা করেন তাহলে কোর্টের ড্রেস পরে যেখানে নেট পাওয়া যায় সেখানে শুনানি করবেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, আমি লক্ষ্য করেছি অনেকে শুনানির কিছু ছবি ফেসবুকে আপলোড করে আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রমকে হেয় করার চেষ্টা করছে। সবাইকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কোর্ট সবেমাত্র যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবেই। তাছাড়া আদালতের কার্যক্রম হেয় করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করা প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে আমাদের সবার দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।
৫. ভিডিও কনফারেন্সে শুনানির সময় আপনি হেডফোন ব্যবহার করলে সব পক্ষের কথা স্পষ্টভাবে শুনতে সহযোগিতা হবে। এক্ষেত্রে সময় এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।
৬. ভিডিও কনফারেন্সের সময় আপনার আশেপাশের শব্দ যেন অন্যপক্ষ শুনতে না পায়, কিংবা শুনানিতে সমস্যার সৃষ্টি না করে সেজন্য অডিও অপশন মিউট করা যেতে পারে। তবে আপনি যখন কথা বলবেন তখন অবশ্যই সেটি আনমিউট করে নিবেন।
৭. কোন কারণে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হতে না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেনোগ্রাফার/পেশকারের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে ফোন করে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা যেতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনা হতে এটি স্পষ্ট যে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় কিছু সমস্যা থাকলেও তা সহজেই সমাধানযোগ্য। আমি ভার্চুয়াল কোর্টের সার্বিক সফলতা কামনা করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা এগিয়ে ছোটখাটো সমস্যা উতরিয়ে ভার্চুয়াল কোর্ট তার প্রত্যাশিত লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছাবেন। জয়তু ভার্চুয়াল কোর্ট।
ড. মো. রাশেদ হোসাইন : সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ।