‘করোনার ছুটিতে সব অফিস আদালত বন্ধ- এটা অনেকেই জানে, তবে জানাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। একটু বুঝিয়ে বলি। আপনি দেখছেন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে, তারা দৃশ্যমান। আপনি কি জানেন, এই জরুরী পরিস্থিতির মধ্যেও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা ছিল, আছে। তবে জনসমাগম এড়াতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রকাশ্য আদালত কার্যক্রম চলেনি। চলা উচিতও না। এই করোনার মধ্যেও অপরাধ কিন্তু থেমে নেই। খুন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে, কোথাও কোথাও মাস্ক পরে মারামারি হচ্ছে! পুলিশ এদের ধরছে। ধরে কোথায় দিচ্ছে? ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে। ম্যাজিস্ট্রেট এমন ধৃত ব্যক্তির প্রয়োজনে জেলে ডুকাচ্ছে, প্রাপ্য মনে করলে জামিন দিচ্ছে। আসামীর স্বীকারোক্তি নিচ্ছে, ভিকটিমদের জবানবন্দি নিচ্ছে। আর এগুলো অলক্ষ্যে হচ্ছে বলে আপনি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের কাজ সম্পর্কে জানছেন না। করোনার এই ভয়ানক ভীতিকর দিনগুলোতে অন্য জরুরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতই জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী কাজ করে যাচ্ছে, তবে অনেকের মত ছবি তুলে, সাক্ষাৎকার দিয়ে নয়, সাংবিধানিক পবিত্র দায়িত্ব পালনে নিরবে, নিভৃতে।
কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশী বন্দী ছিল, সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল। রাষ্ট্র আবার দায়িত্ব দিলো। আগে ভার্চুয়াল কোর্টের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিচার বিভাগ সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলো। মাত্র ৮ কর্ম দিবসে ১৮০০০ হাজার এর বেশী বন্দী মুক্তি পেয়েছে। শিশু আদালতের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছে আরও ২৫০ জনের মত শিশু। এর জন্য জাজরা, ম্যাজিস্ট্রেটরা কোন বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আসেনি, সংক্রমণ নিরাপত্তায় বিশেষ কোন প্রটেকটিভ গিয়ারও পায়নি। বরাবরের মত নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে ও করছে। করোনা কিন্তু তাতে ছাড় দেয়নি। বিচারিক কাজ করতে অফিসে আসতে হয়েছে, স্টাফ, পুলিশ সহ অনেকের সংস্পর্শে আসতে হয়েছে। কাগজপত্র ঘাটতে হয়েছে। আর এভাবে এই মহামারীতে কাজ করতে গিয়ে বিচার বিভাগের ২ জন সিনিয়র সদস্য আজ করোনাক্রান্ত- নেত্রকোনার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জাজ ও মুন্সিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত এই ২ জন বিচারকের জন্য রমজানের পবিত্র দিনে আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই- তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগদান করেন এবং বিচারিক সেবা দিয়ে জনগণের পাশে থাকতে পারেন।’
মো. জিয়াউর রহমান : চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মাগুরা।
(তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগ্রহ)