মো সাইমুম রেজা তালুকদার :
সবার প্রথমে দায়িত্ব হচ্ছে কেউ কোনো অপরাধ করলে সেই অপরাধের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো, অথবা পুলিশ থানায় গিয়ে জেনারেল ডাইরি করা, অথবা ক্ষেত্র বিশেষে সরাসরি পুলিশ থানায় গিয়ে মামলা দায়ের (আইনের ভাষায় একে এফআইআর বলে)।
পুলিশ থানায় জিডি বা মামলা করা সম্ভব না হলে আইনজীবীর সহায়তায় সরাসরি উপযুক্ত আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন, আদালতই তখন পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিবে। এখন উপযুক্ত স্বাক্ষ্য ও প্রমাণাদি সাপেক্ষে উভয় পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি তর্কের পর উপযুক্ত কোনো আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হলেই কেবল একজনকে অপরাধী বলা যাবে।
এখন উপরের কোনোটাই না করে আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও নামে অপরাধের অভিযোগ আনতে চান, তাহলে মনে রাখবেন সেই ব্যক্তি আপনার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫ এবং ২৯ ধরার আলোকে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ ও মানহানির জন্য মামলা দিতে পারবে! তখন উল্টো আপনি দৌড়ের ওপর থাকবেন। তবে এখানে আর একটি ইন্টারেস্টিং আইন আছে। আইনটি হলো “জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১”। অনেকে এই আইনকে Whistleblowers Act ও বলে। এই আইনের ৪ ধরার আলোকে আপনি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন, এই যেমন দুর্নীতির তথ্য, অপরাধের তথ্য, অনীয়মের তথ্য।
এই আইনের ৫ ধারার আলোকে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করার জন্য রাষ্ট্র আপনাকে সুরক্ষা প্রদানেরও ব্যবস্থা করবে। তবে মনে রাখবেন, এই আইনের আলোকে কেবলমাত্র জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন, ব্যক্তি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য নয়। তবে আইনের এটা প্রতিষ্ঠিত নীতি যে দুটি বিশেষ আইনের মধ্যে সর্বশেষ যে আইনটি প্রণীত হয়েছে, সেটিই প্রাধান্য পাবে।
উপরোক্ত বিশেষ আইন দুটির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরে প্রণীত হয়েছে, তাই এই আইনটির সাথে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ আইনটির বিরোধ হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত হলো: জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুটি বিশেষ আইনের মধ্যে বিরোধ নেই। তারপরও, এই ধরনের ইস্যু সম্ভবত এখনও আমাদের আদালতের সামনে আসেনি, তাই আমাদের হয়তো এখনও এমন কোনো আইনি নজির নেই (আপনাদের কারও জানা থাকলে আমাকেও জানিয়ে বাধিত করবেন)।
বিষয়টি নিয়ে আপনাদের বিজ্ঞ মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
মো সাইমুম রেজা তালুকদার : জেষ্ঠ্য প্রভাষক, স্কুল অব ল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ সাইবার এন্ড লিগ্যাল সেন্টার; আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট