পারভেজ তৌফিক জাহেদী :
করোনা ভাইরাস সংকটকালীন দেশব্যাপী লক ডাউনে প্রায় দুই মাসের অধিক সময় আমাদের রাজশাহী এডভোকেট বার এসোসিয়েশন সহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতি বন্ধ থাকায় রাজশাহী বার সহ সকল বার সমিতিগুলো আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে সীমিত আকারে কাজ-কর্ম শুরু হলেও আমাদের দৈনন্দিন আয় স্বাভাবিকের চাইতে ৭৫% কমে গেছে। এই তিন মাসেই আমরা রাজশাহী বার প্রায় কোটি টাকার উপর আয় হারিয়েছি। আমাদের রাজশাহী এডভোকেট বারের মতো দেশের সকল বার সমিতি নিজেরা আয় করে এবং সেই টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ, পানি সহ যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ব্যয় করে। এছাড়াও সকল আইনজীবীদের জন্য কল্যাণ তহবিল, উৎসব, চিকিৎসা সহ অন্যান্য ফান্ডের টাকাও নিজেরা আয় করে এবং নিজেরাই সেখান থেকেই খরচ করে।
আমরা সরকারি কোন অনুদান পাই না। কোন রকম প্রণোদনাও কেউ দেয় না। যদিও এই খাত থেকে একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আমরা সরকারকে আয় করে দেই। এমতাবস্থায় কর্মচারীদের বেতনসহ স্বাভাবিক মেইনটেন্যান্স খরচ বহন করতে সমিতিগুলো হিমসিম খাচ্ছে।
একইভাবে দেশের সকল আইনজীবীগন ব্যক্তিগতভাবেও ভীষণ রকম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। আইনজীবীরা বেতন পান না। ভার্চুয়াল কোর্টের কারনে ১০% ফৌজদারী প্র্যাকটিশনাররা
ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল এডভোকেট সহ আদালত সংশ্লিষ্ট সকলের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। কিন্তু বাস্তবতা তা বলছে না। ই-কোর্ট চালু‘র পূর্ব শর্তসমূহ পূরণ না করে ভার্চুয়াল আদালত শুরু করায় কাংখিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ বিচারপ্রার্থী মানুষ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। থানায় অহরহ মামলা এন্ট্রি হচ্ছে, পুলিশ আসামি ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে কিন্তু আইনী প্রতিকার তথা আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ নাই। ফলে বিচারপ্রার্থী মানুষকে অনৈতিক ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। একই ভাবে অনেক জমি জমা শক্তিশালী স্থানীয়রা জোর পূর্বক দখল করে নিচ্ছে কিন্তু তার দেওয়ানী প্রতিকার দেওয়া যাচ্ছে না। এ রকম অসংখ্য অবর্ণনীয় জটিলতার মধ্যে আমরা আছি।
সরকার গত ৩১.০৫.২০২০ ইং তারিখে লক ডাউন তুলে নিয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল অফিস, ব্যাংক, শপিং–মল, কল কারখানা চলছে। শুধু মাত্র আমাদের আদালতে ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের চিকিৎসক, পুলিশ, প্রশাসন সহ সকল স্তরের কর্মকর্তারা মাঠে থেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। করোনা ভাইরাস সংকট খুব দ্রুত সমাধানেরও সম্ভাবনা নেই। এই ভাবে বসে থাকলে উভয় দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ ক্রমান্বয়ে হার্ড ইমিউনিটির দিকে এগুচ্ছে।
আপাতত ফৌজদারী মামলার হাজিরা, সাক্ষ্য গ্রহণ ও দেওয়ানী মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি রেখে সকল কাজ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে করা সম্ভব। আমাদের বিদ্যমান আদালতের নিয়ম অনুযায়ী বিচারক তার ২/৩ জন কর্মচারী সাথে নিয়েই বিচার কার্য করেন। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা বেশ দূর থেকেই শুনানি করেন। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করলে কেউই সংক্রমিত হবে না। আমি আবারও বলছি আমরা আইনজীবীরা সরকারকে এই খাত থেকে সম্ভবত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করে থাকি। এই টাকা দিয়েই সরকারি কর্মচারীদের বেতন হয়। আইনজীবীগণ কোন বেতন বা প্রণোদনা পান না।
এই অবস্থায় আলোচনার উপরোক্ত বিষয়গুলি সুবিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল আইনজীবী, আইনজীবী সমিতি, বিচারপ্রার্থী জনগন ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ সচল রাখার জন্য অন্তত অধস্তন আদালতসমূহ Actual ভাবে অবিলম্বে খুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই সমস্যাগুলো থেকে দ্রুত পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে একই সাথে আমাদের আইনজীবীদের অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতি সহ বাংলাদেশের সকল আইনজীবী সমিতিগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
পারভেজ তৌফিক জাহেদী : সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী আইনজীবী সমিতি, রাজশাহী
ইমেইল- ptzahedy@gmail.