করোনা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবিকার বিষয়টি বিবেচনা করে যথোপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চ খুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রায় চার মাস ধরে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতসমূহে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত আকারের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ চলছে। আর নিম্ন আদালতে শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় শুনানি ও নিষ্পত্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের প্রায় ৬০ হাজার আইনজীবী। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতির সাথে পরিচিত নয় বলে অনেকেই মামলা পরিচালনা করতে পারছেন না। এছাড়া এ পদ্ধতিতে খুবই সীমিত পরিসরে বিচারকাজ চলছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আইনজীবীদের জীবন-জীবিকা। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায় বিচার বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা। এজন্য দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো অবিলম্বে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করার পক্ষে তারা।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত অবিলম্বে নিয়মিতভাবে খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে নিয়মিত আদালত চালু করার দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে আইনজীবীরা।
এছাড়াও নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়ার পক্ষে সরব সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদীর নেতৃত্বে বেশ কিছুদিন থেকে এ আন্দোলন চলছে। ‘একচ্যুয়াল কোর্ট’ -এর দাবীতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও সমাবেশ এবং সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এ দাবি বাস্তনায়নে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
সবশেষ প্রধান বিচারপতির বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা পুলিশি বাধায় পণ্ড হলেও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে ৫ দফা দাবি জানান তারা। সংগঠনের পক্ষে অবিলম্বে আদালত খুলে দেয়াসহ দাবিগুলো হচ্ছে-
- অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত নিয়মিতভাবে খুলে দিতে হবে।
- আইন অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- ২০২০ ও ২০২১ সালের সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের সব ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করতে হবে।
- দেশের সব আদালতে চার মাস যাবৎ নিয়মিত কোর্ট বন্ধ থাকায় ৬০ হাজার আইনজীবীর প্রত্যেককে সরকারি কোষাগার থেকে আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামানতবিহীন ও সুদমুক্ত ৫ লাখ টাকা ৫ বছর মেয়াদি ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, বাবার সামনে সন্তানের কান্না করোনায় মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। তাই অধিকাংশ আইনজীবী স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত কোর্ট চালুর পক্ষে।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত কোর্ট না থাকায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যাদের আপিল দায়রা জজ আদালতে এবং হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন, তারা আইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। হাজার হাজার আসামি পলাতক, তারা আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ফেরারি জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থায় আইনজীবীদের মাঝে মারাত্মক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিচারপ্রার্থীর আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং আইনজীবীদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত অবিলম্বে খুলে দেওয়ার দাবি জানান এই আইনজীবী।