বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার আঁচ লেগেছে শিক্ষানবিশদের জীবনেও। আইনজীবী তালিকাভুক্তির প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে দ্রুততম সময়ে বাকী দুই ধাপের পরীক্ষা বাধা ডিঙিয়ে যখন নামের পাশে ‘অ্যাডভোকেট’ নামক পরম আরাধ্য শব্দটি লিখবার স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিলেন করোনা যেন তাদের ‘বাড়া ভাতে ছাই’ হয়ে এলো। এর মধ্যে আবার বেশ কয়েক বছর যাবৎ বার কাউন্সিলের সনদ পরীক্ষার নৈয়মিক দীর্ঘসূত্রিতা পেশাগত পরিচয়হীন এসব আইনের শিক্ষানবিশদের শঙ্কিত করে তোলে।
এ বিষয়ে বহুবার সংশ্লিষ্টদের শরণাপন্ন হয়ে কোন ফল হয়নি। এরপর স্মারকলিপি, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেও লাভ হয়নি। উপায়ন্ত না দেখে মহামারী করোনা উপেক্ষা আন্দোলনে নামে ২০১৭ ও ২০২০ সালে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষায় পাশ করা শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও বার কাউন্সিলের অস্থায়ী ভবনের পাশে তাদের দাবীর পক্ষে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি এখনো চলছে।
এবার শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আন্দোলনের আহ্বায়ক সুমনা আক্তার লিলি সারাদেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও সনদ দানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন খোলা চিঠি।
চিঠিতে ভাইবা পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। আর যদি লিখিত পরীক্ষা নিতেই হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছু দাবি পূরণ করতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্টকৃত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুমনা আক্তার লিলির চিঠিটি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হল-
আমি সুমনা আক্তার লিলি, শিক্ষানবিশ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি। ২০১৭ সালে এলএলবি শেষ করে ১ মাসের জন্য পরীক্ষা দিতে পারিনি। তারপর ঠিক সময়ে পরীক্ষার জন্য অজস্র স্মারকলিপি, মানববন্ধন এবং অবশেষে অনশন করেছি। অতঃপর ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এমসিকিউ পরীক্ষা হয় যা বার কাউন্সিলের ইতিহাস সবচেয়ে কঠিন এবং কম শতাংশ পাশের রেকর্ডের পরীক্ষা। আল্লাহর রহমতে এবং কঠিন অধ্যবসায়ের কারণে পাশ করতে সমর্থ হই। পাশ করার পরে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস পুরো পৃথিবীর ন্যায় আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এবং রিটেন পরীক্ষা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে যায়। ইতোপূর্বে বার কাউন্সিলের সমস্ত লিখিত পরীক্ষা এমসিকিউ রেজাল্ট দেয়ার ২-৩ মাসের ভিতরে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ৩ বছর পরীক্ষা না হওয়া এবং করোনা মহামারীর কারণে এমসিকিউ পাশ করার ৪ মাস হয়ে যাওয়ার পরেও লিখিত পরীক্ষার কোন ঘোষণা না আসায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২-৩ বছর করোনা থাকবে এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পরিস্থিতি ঠিক না হলে পরীক্ষা নেয়া হবেনা তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা ২০১৭ এবং ২০২০ সালের এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা গত ৭ জুলাই ২০২০ থেকে অদ্যাবধি এম সি কিউ উত্তীর্ণদের গেজেট প্রকাশ করে সনদের দাবীতে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন করে যাচ্ছি। একটানা ২০ দিন আন্দোলন চলছে।
কিন্তু আমাদের অভিভাবক বার কাউন্সিল থেকে আমাদের জন্য বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন মনে করে নাই। অতঃপর আমাদের একটানা আন্দোলনের কারণে আজ বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার সময়সূচী নির্ধারণ করেছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই এই তারিখ সম্পূর্ণ একটি প্রহসনের তারিখ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে এই তারিখের মাধ্যমে কারণ যেখানে দেশের অন্যতম পাবলিক পরীক্ষা এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেখানে প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষানবিশদের এই করোনা কালীন সময়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আসতে হবে এবং পরীক্ষা দিতে হবে যা স্পষ্ট স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন। এ যেন এক অমানবিক এবং প্রহসনের বিরল দৃষ্টান্ত!
বার কাউন্সিলের উপর আমাদের কোন ভরসা নাই। লিখিত পরীক্ষা দেয়ার পরে আমাদের খাতার কোন নিশ্চয়তা নাই। আবুলের খাতায় পাশ করে মকবুল। এরকম অসংখ্য অভিযোগ লিখিত পরীক্ষা নিয়ে। বার কাউন্সিল যদি পরীক্ষা নিতেই চায় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল জেলা বারে ভাইভা নিয়ে আমাদের সনদ দিন।
বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটিকে বলতে চাই, যদি প্রহসনের লিখিত পরীক্ষা আপনারা নিতেই চান তাহলে আমাদের নিন্মোক্ত যৌক্তিক দাবীগুলো নিশ্চিত করবেন, যদি না নিশ্চিত করেন তাহলে আমরা পরীক্ষা বাতিলের জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।
১) লিখিত পরীক্ষায় ও এম আর শিট সংযুক্ত করতে হবে;
২) লিখিত পরীক্ষা খাতা রিভিউর সুযোগ দিতে হবে;
৩) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার তারিখ দিতে হবে; এবং
৪) আপীল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের ভিতর আমাদের পুরো প্রসেস সম্পন্ন করে উত্তীর্ণদের সনদ দিতে হবে।সর্বোপরি, মাননীয় বার কাউন্সিলের বিজ্ঞ এনরোলমেন্ট কমিটির কাছে অনুরোধ আপনারা আমাদের অভিভাবক। আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।