জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরিচালনা পর্ষদে (গভর্নিং বডি) সভাপতি পদে সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না। সোমবার (২৭ জুলাই) এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হাইকোর্টের গত ২৫ নভেম্বরের দেওয়া রায়ের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত সাংসদদের জায়গায় বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এত দিন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সাংসদদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, একটি রিটের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ফাজিল-কামিলসহ সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ সাংসদদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিমত দেন হাইকোর্ট। সাতক্ষীরার শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের (কলেজ) পরিচালনা কমিটিতে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাংসদকে সভাপতি পদে দেওয়া মনোনয়ন বাতিল ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন অভিমত রয়েছে। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ২৫ নভেম্বর ওই রায় দেন। সম্প্রতি ছয় পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী।
বিভিন্ন রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে উচ্চ আদালত বলেছেন, ‘এটি কাচের মতো স্পষ্ট যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্যগণ সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সর্বজনশ্রদ্ধেয় সংসদ সদস্যদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকতে হয়। গভর্নিং বডির সভাপতির পদ সংসদ সদস্যদের মহান পদের সঙ্গে একেবারেই বিপরীত। সংসদ সদস্যগণ তাঁর নির্বাচিত এলাকাসহ সমস্ত দেশের উন্নয়নে নিবেদিত, অপর দিকে গভর্নিং বডির সভাপতি শুধু ওই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিবেদিত।’
হাইকোর্টের এই অভিমতের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রায় হাতে পাওয়ার পর সেটি দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানাল। এর মধ্য দিয়ে স্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর ডিগ্রি পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সাংসদেরা পদাধিকার বলে সভাপতি হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। আগের নিয়মে একজন সাংসদ ডিগ্রি পর্যায়ের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনার কমিটির সভাপতি হতে পারতেন।
এর আগে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিতে সাংসদদের সরাসরি সভাপতি হওয়ার সুযোগটি বন্ধ হয়। আগে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একজন সাংসদ সর্বোচ্চ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারতেন।