মোঃ ইমরান হোসাইন রুমেল:
এতিমদের সম্পত্তির অধিকার হতে বাদ দেওয়ার যে প্রথাগত রীতি উপমহাদেশে বিষফোঁড়া আকার ধারন করে তা হতে মুসলিম পরিবার পরিজনকে বিরত রাখার জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এমন আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়। দেশের প্রগতিশীলতার বিরোধী আলেম সমাজের চাপকে এড়িয়ে গিয়ে সরকার অনড় থাকেন এই আইন প্রনয়নে।
তখনকার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে একজন প্রবীন আইনজীবী বলেন “ইস্ট পাকিস্তানে বাইতুল মোকাররম মসজিদ উদ্বোধন করতে মোনায়েম সরকার খুবই ভয়ে বিহম্বল ছিলেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের বুঝান যে, আপনি এখানে আসলে রক্তারক্তি হয়ে যাবে। তাই সেনাবাহিনী বিশেষ ব্যবস্থায় মোনায়েম সাহেবকে নিয়ে আসেন বায়তুল মোকাররাম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। এসে বিদ্রোহকারী তেমন কাউকে না দেখে তিনি বলেন আমাকে একটু নামান, তথাপিও প্রশাসন সেই অনুমতি না দিয়ে মাথায় হেলমেট পরিয়ে বাহিরে দেখার সুযোগ করে দেন।”
এই আইনের ৪নং ধারায় উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী সংশোধন আনা হয়। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে লা-ওয়ারিশ প্রথাকে বাতিল করা হয়। এ আইনে বলা হয়, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টিত হওয়ার পূর্বে মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা কন্যার মৃত্যু হলে, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টিত হওয়ার সময় ঐ পুত্র বা কন্যার সন্তানাদি যদি জীবিত থাকে, তাহলে ঐ মৃত পুত্র বা কন্যা বণ্টনের সময় জীবিত থাকলে সে যে অংশ পেতো, তার সন্তানাদি সমষ্টিগতভাবে অনুরূপ অংশ পাবে।
এমন বিরোধী আইন তখন আইনবেত্তাগন মেনে নেন, কেবল মাত্র সমাজের এতিমদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। আজ এত বছর পর বাংলাদেশে এতিমখানার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে দেখে আইনজীবী হিসেবে আমি অবাক হই তাহলে কী এতিমরা সঠিক হিস্যা পাবার সুযোগ সরকার করতে অপারগ!
তাহলে যে আইন প্রচলিত আছে তার চেয়েও কঠিন আইন “এতিমের সম্পত্তি সুরক্ষা আইন ” নামে কোন আইনের প্রয়েজনীয়তা দৃষ্ট?? যে আইন এতিমকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর্যন্ত সম্পত্তির সঠিক ব্যবহারে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। সংবিধান সম্পত্তি রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করেছে শুরু হতেই।
এতে করে যে হারে এতিমদের নামে লিল্লাহ বোর্ডিং খোলা হয় তার পরিমান কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করি। সমাজকে এতিমদের ব্যাপারে আরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে হবে। সরকারের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এতিমদের জন্য এমন কিছু করার জন্য।
মোঃ ইমরান হোসাইন রুমেল: আইনজীবী; সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ।