বিদেশে থেকে সিকদার গ্রুপের দুই ভাইয়ের আগাম জামিন আবেদনকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশের বাইরে থেকে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনাও বেআইনি এবং নীতিনৈতিকতা বহির্ভূত।
ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করা এক আবেদন শুনানি নিয়ে দেওয়া আদেশে উচ্চ আদালত এ কথা বলেন।
সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার নির্বিঘ্নে দেশে ফিরতে জামিন আবেদন করেছিলেন। ব্যাংককে অবস্থান করে জামিন আবেদন করায় দুই ভাইকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। বরং আদালতের সময় নষ্ট করায় ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) জরিমানা করেন আদালত। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে এসব পিপিই জমা দিতে বলা হয়।
ভার্চ্যুয়াল শুনানি নিয়ে গত ২০ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। সেই আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।
আদেশে বলা হয়েছে, ‘এমন নজিরবিহীন আগাম জামিনের দরখাস্ত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম। আর আইন ও বিধি মোতাবেক বিদেশ থেকে আগাম জামিনের দরখাস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের বেআইনি এবং নীতিনৈতিকতা বহির্ভূত আবেদন পরিত্যাজ্য। এছাড়া আইন, বিধি ও প্র্যাকটিস ডিরেকশন মোতাবেক বাংলাদেশের সীমানার বাইরে থেকে আদালতে অ্যাডভোকেট (আইনজীবী) হিসেবে বক্তব্য এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সীমানার বাইরে থেকে অ্যাডভোকেট হিসেবে মামলা পরিচালনাও বেআইনি এবং নীতিনৈতিকতা বহির্ভূত।’
আদেশে আইনজীবীদের আদালতের প্রতি কর্তব্য নিয়ে বলা হয়, ‘মানব শরীরে যেমন দুটি চোখ আছে, তেমনী বিচার ব্যবস্থায় দুটি চোখ আছে। বিচার ব্যবস্থার দুটি চোখের একটি হল বিচারক, অপরটি আইনজীবী। বিচারক এবং আইনজীবীর জ্ঞানদীপ্ত চোখে যে বিচার ব্যবস্থা পরিচালিত সেটিই ন্যায় বিচার।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘সকল জাগতিক কর্মের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রদান করা সবচেয়ে কঠিন ও দুরূহ কর্ম। এই কঠিন এবং দুরূহ কাজকে সঠিক এবং ন্যায় সম্মত ভাবে সম্পাদন করতে সাহায্যকারী হিসেবে আদালতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হল আইনজীবী।’
এর আগে গত ২০ জুলাই এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ব্যাংকক থেকে সিকদার গ্রুপের দুই ভাইয়ের করা আগাম জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
এছাড়া বিদেশে থেকে আগাম জামিন চেয়ে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করায় জরিমানা হিসেবে ১০ হাজার পিপিই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে সিকদার গ্রুপের দুই ভাইয়ের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওইদিন দুই ভাইয়ের জামিন আবেদনের পক্ষে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আব্দুল বাসেত মজুমদার ও এএম আমিন উদ্দিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। অন্যদিকে ভার্চুয়াল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
গত ১৯ মে সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা হয়। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ৭ মে রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি করেন। সেখানে দুজনকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবরণীতে বলা হয়, পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকী সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে সময় এ ঘটনা ঘটে। এরপর ২৫ মে মামলার তদন্তকালীন নিজেদের ‘অসুস্থ’ দেখিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে চলে যান এই দুই ভাই।