ভারতের প্রবীণ আইনজীবী ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কর্মী প্রশান্ত ভূষণকে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির সুপ্রীম কোর্ট। তবে তার সাজা কী হবে, তা নিয়ে ২০ অগাস্ট শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
জুন মাসে মি. ভূষণের করা দুটি টুইট নিয়ে স্বতপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রথম টুইটে প্রশান্ত ভূষণ লিখেছিলেন, “ভবিষ্যতে যখন ইতিহাসবিদরা পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখবেন যে আনুষ্ঠানিক জরুরী অবস্থা না জারী থাকলেও গত ছবছর ধরে ভারতে কীভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, তারা নিশ্চই এই ধ্বংসে সুপ্রীম কোর্টের ভূমিকা, বিশেষত বিগত চারজন প্রধান বিচারপতির ভূমিকার দিকে নজর দেবেন।”
দ্বিতীয় টুইটে তিনি লিখেছিলেন, “এমন একটা সময় নাগপুরে রাজভবনে ৫০ লক্ষ টাকার দামের একটি মোটরসাইকেলে চেপেছেন প্রধান বিচারপতি, যেটির মালিক একজন বিজেপি নেতা, তার মুখে মাস্ক নেই বা মাথায় হেলমেট নেই, যখন তিনি সুপ্রীম কোর্ট লকডাউন জারী রেখে নাগরিকদের বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছেন।”
এই নিয়ে মামলা হওয়ার পরে অবশ্য মি. ভূষণ মেনে নিয়েছিলেন যে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে কেন হেলমেটা পড়েন নি, সেই প্রশ্নটা তোলা তার উচিত হয় নি। তিনি বুঝতে ভুল করেছিলেন যে প্রধান বিচারপতি মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন না, শুধুই বসে ছিলেন।
তবে অন্য টুইটটির ব্যাপারে মি. ভূষণ বলেছিলেন, “চিন্তাধারার এরকম প্রকাশ স্পষ্টবাদী, অপ্রিয় এবং কঠিন হতে পারে, কিন্তু এটাকে আদালত অবমাননা বলা যায় না। কোনও একজন বা একাধিক প্রধান বিচারপতির কাজের সমালোচনা মানেই আদালতকে অপমান যেমন নয়, তেমনই তা আদালতের কর্তৃত্বকেও ছোট করার জন্য নয়।”
তার হয়ে মামলাটি লড়েছিলেন যে আরেক প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে, তিনি শুনানীর সময়ে বলেছিলেন ওই টুইট দুটি আদালতের উদ্দেশ্যে করা হয় নি, বিচারপতিদের ব্যক্তিগত ব্যবহারই টুইট দুটির লক্ষ্য ছিল।
তবে বিচারপতি অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ অবশ্য শুক্রবার সেই সব যুক্তি খারিজ করে দিয়ে প্রশান্ত ভূষণকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আদালত বলেছে, “টুইটারে এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু বিচারব্যবস্থাকে অপমান করা হয় নি, সুপ্রীম কোর্ট, বিশেষত ভারতের প্রধান বিচারপতির দপ্তরের সম্বন্ধেও মানুষের মনে যে সম্মান আছে, তার ক্ষতিসাধন করেছে।
ভারতের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি স্বীকৃত অধিকার। সর্বোচ্চ আদালত এর আগে নানা রায়ে সেই অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।
কিন্তু সংবিধানেই বলা হয়েছে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কয়েকটি ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ। এইসব শর্তগুলির একটি হল আদালত অবমাননা আইন।
প্রশান্ত ভূষণের মামলা এধরণের প্রথম মামলা, যেখানে টুইটারে প্রকাশ করা মতামত দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সুপ্রীম কোর্ট।
এর আগে যে আদালত অবমাননার মামলাটি নিয়ে ভারতে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল, সেটি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করার ঘটনা।
সেই মামলায় ওই বিচারপতি সি এস কারনানকে ছমাসের কারাদন্ডের সাজা দিয়েছিল সুপ্রীম কোর্ট। সেটাই ছিল ভারতের কোনও চাকরীরত বিচারপতিকে জেলে পাঠানোর ঘটনা। সূত্র- বিবিসি বাংলা